আজকাল ওয়েবডেস্ক: কুয়েতের হাওয়ালি এলাকায় এক অদ্ভুত ঘটনায় প্রায় জেলে যেতে বসেছিলেন এক ব্যক্তি—আর তার সূত্রধর ছিল পরিবারের পোষা তোতা পাখি। আরব টাইমসের প্রতিবেদনে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করছিলেন যে তার স্বামী বাড়ির গৃহপরিচারিকার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক চালাচ্ছেন। কিন্তু কোনো প্রমাণ হাতে পাচ্ছিলেন না। ঘটনাটি শুরু হয় তখন, যখন পোষা তোতা হঠাৎ করে বাড়িতে ‘অন্তরঙ্গ আলাপ’ ধরনের কিছু উক্তি বারবার বলতে শুরু করে। স্ত্রী জানান, পাখিটি ওই বাক্যগুলো এমনভাবে আওড়াচ্ছিল, যা ছিল অত্যন্ত 'ফ্লার্টি' ও ব্যক্তিগত। এই ঘটনা দেখে স্ত্রীর সন্দেহ চূড়ান্ত রূপ নেয়।
তিনি অভিযোগ করেন, একদিন অফিস থেকে নির্ধারিত সময়ের আগেই বাড়ি ফিরলে স্বামী স্পষ্টতই অস্বস্তিতে পড়েন ও নার্ভাস হয়ে পড়েন। এরপরই তিনি হাওয়ালি থানায় গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। স্ত্রী দাবি করেন, তোতার মুখে শোনা ওই বাক্যগুলোই তার অভিযোগের মূল ভিত্তি। কিন্তু মামলার তদন্তকারী প্রসিকিউশন অফিসার শেষ পর্যন্ত জানান, এ ধরনের অভিযোগ আদালতে টিকবে না, কারণ তোতা পাখি ওই কথাগুলো আসলে কোথা থেকে শিখেছে তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করা যায়নি। সম্ভবত পাখিটি টেলিভিশন বা রেডিও থেকে একই ধরনের কথা শুনে শিখে থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত, কুয়েতে পরকীয়া একটি দণ্ডনীয় অপরাধ, যার শাস্তি জেল কিংবা কঠোর শ্রমের সাজা পর্যন্ত হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের অভাব’-এর কারণে মামলা আদালতে গড়ায়নি। এ ঘটনায় স্থানীয় মহলে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই হাস্যরসের সঙ্গে লিখেছেন, “বাড়িতে তোতা পোষার আগে দু’বার ভাবুন।” আবার কেউ কেউ বলেছেন, “প্রযুক্তির চেয়েও কখনো কখনো পোষা প্রাণীই হয়ে যায় বড় প্রমাণ।”
কুয়েতে পরকীয়া বা বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক আইনত গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশটির দণ্ডবিধি অনুযায়ী, বিবাহিত ব্যক্তি যদি প্রমাণিতভাবে স্বামী বা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কারও সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন, তবে তাকে জেল বা কঠোর শ্রমের সাজা দেওয়া হতে পারে। শাস্তির মেয়াদ পরিস্থিতি ও প্রমাণের ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হলেও, সাধারণত এক বছর থেকে শুরু করে কয়েক বছরের কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
আইন অনুযায়ী, এই ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের জন্য প্রত্যক্ষ সাক্ষী, স্পষ্ট অডিও-ভিডিও রেকর্ডিং বা স্বীকারোক্তি প্রয়োজন। কেবল সন্দেহ বা গুজবের ভিত্তিতে মামলা গড়ায় না। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের কারণে কুয়েতে এই আইন অত্যন্ত কঠোরভাবে প্রয়োগ হয়। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে ভুক্তভোগী পক্ষ পুলিশ বা আদালতের বদলে পারিবারিক বা সামাজিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করে নিতে চায়।
