আজকাল ওয়েবডেস্ক:  মেক্সিকো জুড়ে প্রবল বর্ষণের জেরে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শতাধিক এলাকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ শনিবার জানিয়েছে, ৩২টির মধ্যে ৩১টি রাজ্যে টানা ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার ফলে নদীগুলি উপচে পড়েছে, গ্রামগুলি প্লাবিত হয়েছে, একাধিক স্থানে ভূমিধস নেমে রাস্তা ও সেতু ভেঙে পড়েছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মধ্য মেক্সিকোর হিদালগো রাজ্য। সেখানে অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, প্রায় এক হাজারের বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৯০টি গ্রাম এখনো উদ্ধারকর্মীদের নাগালের বাইরে রয়েছে বলে ফেডারেল সিকিউরিটি সেক্রেটারিয়েট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।

পাশাপাশি প্রতিবেশী পুয়েবলা রাজ্যে অন্তত নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাজ্য প্রশাসনের হিসাবে, পুয়েবলায় প্রায় ৮০ হাজার মানুষ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পূর্বাঞ্চলের ভেরাক্রুজ রাজ্যে পাঁচজন এবং কেন্দ্রের কেরেতারো রাজ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম *X*-এ লিখেছেন, “আমরা রাস্তা খুলে দেওয়া ও দুর্গতদের সহায়তায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দল ও কর্মী মোতায়েন করছি।” তিনি আরও জানান, হাজার হাজার সেনাসদস্য, নৌকা, বিমান ও হেলিকপ্টার উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি সেনা উদ্ধার সরঞ্জাম ও যানবাহনসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। গৃহহীনদের জন্য বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: কাবুলে বিমান হামলার প্রতিশোধ, তালিবানদের পাল্টা মারে নিহত ১৫ পাক সেনা, দখল একাধিক সেনা চৌকি!

সবচেয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতির এলাকা হলো সিয়েরা মাদ্রে ওরিয়েন্টাল পর্বতমালা, যা মেক্সিকোর উপসাগর উপকূল বরাবর বিস্তৃত। পাহাড়ি এই অঞ্চলের বহু ছোট ছোট গ্রাম শুক্রবার থেকেই বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এএফপি-র এক দল সাংবাদিক হিদালগো রাজ্যের তুলানসিঙ্গো শহরে গিয়ে দেখেছেন, পর্বতাঞ্চলের দিকে যাওয়া বেশ কয়েকটি সড়ক ভূমিধসের কারণে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ।

২০২৫ সালের শুরু থেকেই মেক্সিকোতে অস্বাভাবিক মাত্রার বৃষ্টিপাত দেখা যাচ্ছে। রাজধানী মেক্সিকো সিটিতেও এ বছর বৃষ্টির রেকর্ড হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ইসিদ্রো কানো এএফপি-কে জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টিপাতের কারণ হলো মৌসুমি পরিবর্তনজনিত মেঘগঠন, যেখানে উপসাগরীয় উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু পর্বতের ওপর উঠে ঘন মেঘ সৃষ্টি করছে। এর সঙ্গে উত্তর দিক থেকে আসা একটি ঠান্ডা বায়ুপ্রবাহ যুক্ত হওয়ায় বৃষ্টিপাত আরও বেড়েছে।

অন্যদিকে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতেও আবহাওয়া দফতর সতর্ক দৃষ্টি রাখছে, কারণ সেখানে ট্রপিক্যাল ডিপ্রেশন রেমন্ড এবং একসময় ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়া প্রিসিলা-এর বাকি অংশ এখনো ভারী বৃষ্টি বর্ষণ করছে। এই দুটি ঝড় চিয়াপাস, গুয়েরেরো, ওয়াহাকা ও মিচোয়াকান রাজ্যে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, রেমন্ড* সপ্তাহান্তে বাজা ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণ অংশে আঘাত হানতে পারে।

মেক্সিকোর কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলিতে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে।