আজকাল ওয়েবডেস্ক: চলন্ত বাস ছিটকে পড়েছিল ভারী একটি বস্তু। সাদা কাপড়ে মোড়ানো ছিল সেটি। পথচলতি কেউই সেটি খেয়াল করেননি। কিন্তু সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলা সেটি খেয়াল করেছিলেন। মাটিতে বস্তুটি পড়তেই বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন তিনি। তাতেই সন্দেহ গাঢ় হয়। সেটির কাছে পৌঁছেই যা দেখেন, তাতেই শিউরে ওঠেন তিনি। 

সেই সাদা কাপড়ে মোড়ানো ছিল একটি সদ্যোজাত পুত্র। চলন্ত বাস থেকে সেটিকে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল রাস্তায়। বিষয়টি বুঝতেই পুলিশে তড়িঘড়ি খবর দেন তিনি। সেই বাসটিতে তল্লাশি চালিয়ে আসল কাহিনি প্রকাশ্যে আসে। চলন্ত বাস থেকে সদ্যোজাত পুত্রসন্তানকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন মা। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন খোদ স্বামীই। 

বিষয়টি ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। জানা গেছে, চলন্ত বাস থেকে রাস্তায় আছাড় খেয়েই সদ্যোজাত সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। ঘাতক মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পারে পুলিশ। ঘটনাটি ঘিরে তদন্ত চলছে জোরকদমে। 

আরও পড়ুন: যমজ ভাইয়ের সঙ্গে প্রেম, উদ্দাম যৌনতা! ৫৫ বছরের মহিলা বললেন, 'প্রতিটা রাত ছিল 'থেরাপি'র মতো'

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের পারভানিতে। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সাড়ে ছ'টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে পাথরি-সেলু সড়কের উপরে। চলন্ত বাসে ১৯ বছরে তরুণী সন্তান প্রসব করেন। এরপর স্বামীর সাহায্য নিয়ে সদ্যোজাতকে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে, জানলা দিয়ে রাস্তায় ছুড়ে ফেলেন। 

তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, রীতিকা ধেরে নামের ওই তরুণী এবং তাঁর স্বামী আলতাফ শেখ পুনে থেকে পারভানির দিকে যাচ্ছিল। রীতিকা ও আলতাফ গত দেড় বছর ধরে পুনেতে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তাঁরা আদতে পারভানির বাসিন্দা ছিলেন। এদিন পারভানিতেই দু'জনে একসঙ্গে ফিরছিলেন। 

সন্ত প্রয়াগ ট্রাভেলস সংস্থার স্লিপার কোচের বাসে উঠেছিল দম্পতি। চলন্ত বাসের সিটে বসেই সন্তান প্রসব করেছিলেন। কেউ কেউ কান্নার আওয়াজ শুনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে সেই কান্নার আওয়াজ থেমে যেতেও দেখেন। একমাত্র বাসের চালক খেয়াল করেছিলেন, চলন্ত বাস থেকে ভারী কিছু ছিটকে রাস্তায় পড়ে গিয়েছে। বিষয়টি খেয়াল করেই আলতাফকে জিজ্ঞেস করেন বাসের চালক। উত্তরে তিনি বলেন, স্ত্রী বমি করেছিলেন। বাসে যেতে যেতে অস্বস্তি বোধ করছিলেন। সেই ব্যাগটিই বাইরে ফেলে দিয়েছেন। 

এদিকে ততক্ষণে ১১২ হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে বিষয়টি পুলিশে জানিয়ে দেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা সেই মহিলা। সঙ্গে সঙ্গে সেই বাসের খোঁজ চালিয়েও মাঝ রাস্তায় দাঁড় করানো হয়। দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আটক করে পুলিশ। জেরায় তাঁরা সবটাই স্বীকার করে নেন। দম্পতি জানায়, তারা অত্যন্ত গরিব। নিজেদের খাবার জোগাড় হয় না দু'বেলা। সন্তানের জন্ম দিলেও, তাকে খাওয়ানোর মতো আর্থিক অবস্থা তাদের নেই। এমনকী সন্তানের দেখভাল করার ক্ষমতা না থাকার জন্যেই এভাবেই মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। 


রীতিকা দাবি করেছেন, আলতাফ তাঁর স্বামী। কিন্তু বিবাহের কোনও প্রমাণ তাঁরা কেউই দেখাতে পারেননি। এই ঘটনায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৯৪(৩) এবং ৫ ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। রীতিকাকে হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত জারি রেখেছে পুলিশ।