আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাতে একসঙ্গে খেতে বসেছিল। ভাত আর ডাল খেতে দিয়েছিল মা। তিন বোন গল্প করতে করতে ডিনার করছিল। খাওয়াদাওয়ার পরেই ঘটল বিপত্তি। একে একে তিন বোন গুরুতর অসুস্থ। ক্রমেই শারীরিক অবস্থার অবনতি। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা হল না। দিন কয়েক পরেই তিন বোনের মৃত্যু হল।
প্রথমে পুলিশ সন্দেহ করেনি। খাবারে বিষক্রিয়ার জেরেই তিন বোনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা ছিল তাদের। তিনজনের মৃত্যু দুর্ঘটনা বলেই মামলা রুজু করা হয়েছিল। কিন্তু শনিবার রাতেই কাহিনি তে নয়া মোড়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পৌঁছয় পুলিশের হাতে। জানা যায়, তাদের খাবারে বিষ মেশানো ছিল। বিষ মেশানো খাবার খেয়েই তিন বোনের একসঙ্গে মৃত্যু হয়েছে।
এই ঘটনার পরেই তিন নাবালিকার মায়ের কীর্তিও ফাঁস হল। তিন মেয়েকে তরুণীই খুন করেছে। বর্তমানে সে পুলিশি হেফাজতে। কিন্তু খুনের নেপথ্যে কী কারণ? তা জেনেই চমকে গেছে পুলিশ।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের থানে জেলায়। রবিবার পুলিশ জানিয়েছে, শাহাপুর এলাকার আসনোলি গ্রামের তালেপাড়ার বাসিন্দা সন্ধ্যা সন্দীপ বেরে নামের ২৭ বছর বয়সি তরুণী। স্বামীর সঙ্গে থাকত না দীর্ঘদিন। তিন মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকত সে। তিন মেয়ের বয়স, ১০, আট ও পাঁচ। তিন নাবালিকাকেই একসঙ্গে খুন করেছে সন্ধ্যা।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎস্পৃষ্টের রটনাই কাল! আতঙ্কে হুড়োহুড়ি শুরু, মনসা মন্দিরে পদপিষ্টে মৃত্যুমিছিল জারি
ঘটনাটি ঘটেছে গত ২০ জুলাই। পুলিশ জানিয়েছে, রাতে তিন মেয়েকে ভরণ ভাত খেতে দিয়েছিল সন্ধ্যা। এটি ওই এলাকার বিশেষ একধরনের ভাত ও ডাল। মায়ের হাতের রান্না মজা করে খাচ্ছিল তিন বোন। কে জানত, মায়ের হাতের রান্নাই একে একে তিনজনের প্রাণ কেড়ে নেবে। সেই রাতে খাবার খাওয়ার পরেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে তারা। ঘনঘন বমি, পেটে যন্ত্রণার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
প্রথমে সন্তানদের হাসপাতালে নিয়ে যায়নি সন্ধ্যা। কিন্তু প্রতিবেশীরা টের পেয়ে যাওয়ায়, তাদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে দুই নাবালিকাকে মুম্বইয়ের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। আরেক নাবালিকাকে নাসিকের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মুম্বইয়ের হাসপাতালে গত ২৪ ও ২৫ জুলাই পরপর দু'দিনে দুই নাবালিকার মৃত্যু হয়। আরেকজন নাসিকের হাসপাতালে ২৪ জুলাই মারা যায়।
শনিবার রাতে পুলিশের কাছে পৌঁছয় অটোপসি রিপোর্ট। এরপরই ঘাতক মায়ের কীর্তি ফাঁস হয়। রিপোর্টে জানা যায়, বিষ মেশানো খাবার খেয়েই তিন নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে। প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্ধ্যাকে আটক করে পুলিশ। মাঝ রাতে তাঁকে দীর্ঘ জেরার পর গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশি জেরায় সন্ধ্যা জানায়, তার স্বামী নিত্যদিন মদ্যপান করে। যা ঘিরে দাম্পত্য কলহ চরমে পৌঁছয়। স্বামীর আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে সংসার ছেড়ে সে আলাদা থাকতে শুরু করে। সঙ্গে ছিল তিন সন্তান। কিন্তু সেভাবে তার কোনও উপার্জন ছিল না। আর্থিক অনটন ছিল। স্বামীর উপর রাগ করেই তিন সন্তানকে হঠাৎ বিষ খাইয়ে সে খুন করে। ঘাতক মায়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
