আজকাল ওয়েবডেস্ক: মন্দিরে যাচ্ছিলেন গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা।‌ পুজো দিতে যাওয়ার পথেই মর্মান্তিক পরিণতি হল পরপর পুণ্যার্থীর। ভোররাতে ধাক্কা মারে একটি ট্রাক। ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান পুণ্যার্থীরা। এই জেরেই আটজনের মৃত্যু হল। আহত হয়েছেন বহু। 

 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার ভোররাতে। উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে একটি ট্রাকের সঙ্গে ট্র্যাক্টর ট্রলির সজোরে সংঘর্ষ হয়। এই দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৪৩ জন। অনেকেরই শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মৃতদের মধ্যে দুজনের বয়স দুই বছরের কম। আহতদের মধ্যে ১২ জনের বয়স ১৮ বছরের কম।‌ তারা সকলেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। 

 

পুলিশ আধিকারিক দীনেশ কুমার সিং জানিয়েছেন, অরনিয়া বাইপাসের কাছে বুলন্দশহর- আলিগড় সীমান্তের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। ট্রাকটি ট্র্যাক্টর ট্রলির পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে। সংঘর্ষের পর ট্র্যাক্টর ট্রলিটি উল্টে যায়। ওই ট্র্যাক্টর ট্রলিতে ৬১ জন ছিলেন। কসগঞ্জ জেলার রফতপুর গ্রাম থেকে তাঁরা প্রত্যেকেই রাজস্থানের জাহারপীরের দিকে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার জেরে ঘটনাস্থলেই আটজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৪৩ জন। আহতদের মধ্যে তিনজন ভেন্টিলেশনে সার্পোটে রয়েছেন। 

 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দশজনের চোট গুরুতর নয়। আলিগড় মেডিক্যাল কলেজে দশজন, বুলন্দশহর জেল হাসপাতালে আরও দশজন এবং খুরজার কৈলাশ হাসপাতালে ২৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মৃতদেহগুলি ইতিমধ্যেই ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ট্রাকটি হরিয়ানার।‌ চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, নাকি বেপরোয়া গতিতে চলছিল, তা ঘিরে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। 

 

আরও পড়ুন: সপ্তাহের শুরুতেই কমল সোনার দাম, আজ কলকাতায় ২২ ক্যারাটের দরে বিরাট চমক

 

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুতেই উত্তরপ্রদেশের আরও একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় একাধিক পুণ্যার্থী প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের গোন্দা জেলায়। পুলিশ জানিয়েছে, এদিন সকালে ভারী বৃষ্টির মধ্যে একটি বোলেরো গাড়ি হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারায়। গাড়িটিতে ১৫ জন যাত্রী ছিলেন। চালক নিয়ন্ত্রণ হারাতেই রাস্তার ধারে একটি খালে যাত্রীবাহী গাড়িটি উল্টে পড়ে। বন্ধ গাড়িতে দমবন্ধ হয়েই যাত্রীদের প্রাণ যায়। 

 

বিকট শব্দ শুনেই স্থানীয়রা ছুটে আসেন। তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় পুলিশে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল। গাড়ি থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১১ জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। বাকি চারজনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

 

পুলিশ আরও জানিয়েছে, গাড়ির যাত্রীরা একটি মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছেন। একটি মন্দিরে পুজো দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সকলে। এক এলাকার বাসিন্দা হয়তো সকলেই‌ পুজো দিয়ে ফেরার পথেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তাঁরা। দুর্ঘটনার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। চালক কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হারালেন তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গাড়ির চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, নাকি বেপরোয়া গতিতে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন, তাও তদন্ত করছে তারা। 

 

দুর্ঘটনার পরেই শোকপ্রকাশ করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। মৃতদের পরিবারের প্রতি আর্থিক ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ লিখেছেন, 'গোন্দা জেলায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এতজনের প্রাণহানি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। মৃতদের পরিবার পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। পাশাপাশি আহতদের যথাযথ চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত হাসপাতালে ভর্তি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আধিকারিকদের।' 

 

প্রসঙ্গত, গত সোমবার উত্তরপ্রদেশে আরও একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে‌। সোমবার ভোররাতে উত্তরপ্রদেশের বারাবঁকি জেলার আওসানেৎশ্বর মহাদেব মন্দিরে ভয়াবহ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল অন্তত দুই জন ভক্তের। আহত হয়েছেন আরও ১৯ জন। পুলিশ ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৩টা নাগাদ মন্দিরে জড়ো হওয়া ভক্তদের উপর আচমকা একটি বিদ্যুতের তার পড়ে যায়, যার ফলে হুড়োহুড়ি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

 

জেলা শাসক শশাঙ্ক ত্রিপাঠী জানান, “সোমবার শ্রাবণ মাসের তৃতীয় সোমবারে দর্শনের জন্য ভোর থেকেই ভক্তরা জমা হয়েছিলেন। সেই সময় কিছু বানর ওভারহেড বৈদ্যুতিক তারে লাফাতে থাকে, যার ফলে পুরনো ও ক্ষয়প্রাপ্ত তারটি ছিঁড়ে পড়ে টিনের ছাউনির ওপর। ছাউনিতে কারেন্ট ছড়িয়ে পড়ে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন অনেকেই।” পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে একজন হলেন মুবারকপুরা গ্রামের বাসিন্দা ২২ বছর বয়সি প্রশান্ত। অপর ব্যক্তির পরিচয় এখনও জানা যায়নি। দু'জনেরই মৃত্যু হয় ত্রিবেদিগঞ্জ কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।