আজকাল ওয়েবডেস্ক: কেন্দ্রীয় সরকারের অনলাইন গেমিং নিষিদ্ধকরণ বিল পাস হওয়ার পর অবৈধ বেটিং চক্রের বিরুদ্ধে বড়সড় পদক্ষেপ নিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। শুক্রবার ও শনিবার দেশজুড়ে ৩১টি স্থানে তল্লাশি চালায় ইডি এবং শনিবার কংগ্রেস বিধায়ক কেসি ভীরেন্দ্রকে গ্রেপ্তার করে। কর্ণাটকের এই বিধায়ক ও তার ঘনিষ্ঠদের অবৈধ অনলাইন ও অফলাইন বেটিং নেটওয়ার্কে জড়িত থাকার অভিযোগে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তল্লাশিতে প্রায় ১২ কোটি টাকা নগদ (যার মধ্যে ১ কোটি টাকা বিদেশি মুদ্রা), প্রায় ৬ কোটি টাকার সোনার গয়না, ১০ কেজি রূপোর সামগ্রী এবং চারটি বিলাসবহুল গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়। পাশাপাশি ১৭টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও দুটি ব্যাঙ্ক লকার ফ্রিজ করা হয়েছে। ভীরেন্দ্রর ভাই কেসি নাগারাজ এবং ছেলে প্রুথ্বী এন রাজ-এর বাড়ি থেকে বেশ কিছু সম্পত্তির কাগজও উদ্ধার হয়।
আরও পড়ুন: জাতীয় মহাকাশ দিবসে বড় ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর, কাদেরকে টেক্কা দেবে ভারত
ইডির দাবি, চিত্তরদুর্গার বিধায়ক ভীরেন্দ্র একাধিক বেটিং প্ল্যাটফর্ম চালাতেন, যার নাম ছিল King567 ও Raja567। এছাড়া তার আরেক ভাই কেসি থিপ্পেস্বামী দুবাই-ভিত্তিক তিনটি সংস্থা (Diamond Softech, TRS Technologies, এবং Prime9 Technologies) চালাতেন, যা কল সেন্টার এবং গেমিং কার্যক্রমের মাধ্যমে বেটিং নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ।
ক্যাসিনোতেও অভিযান করা হয়। তল্লাশি অভিযান বিস্তৃত হয় গ্যাংটক, চিত্তরদুর্গ, বেঙ্গালুরু, হুবলি, যোধপুর, মুম্বই ও গোয়া-তে। গোয়ার পাঁচটি বড় ক্যাসিনোতেও হানা দেওয়া হয়—Puppy’s Casino Gold, Ocean Rivers Casino, Puppy’s Casino Pride, Ocean 7 Casino, এবং Big Daddy Casino।

তদন্তে জানা গেছে, সম্প্রতি ভীরেন্দ্র ও তার সহযোগীরা বাগডোগরা হয়ে গ্যাংটকে যান, যেখানে একটি ক্যাসিনোর জন্য জমি লিজ নেওয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছিলেন। ইডির হাতে আসা নথি ও ডিজিটাল প্রমাণে ধরা পড়েছে যে, বেআইনি আয়ের টাকা গোপন রাখতে জটিল আর্থিক লেনদেন ও মানি লন্ডারিং-এর চেষ্টা করা হয়েছিল।প্রমাণ হাতে আসার পর ২৩ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে ইডি গ্যাংটক থেকে ভীরেন্দ্রকে গ্রেপ্তার করে। তাকে সিকিমের বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হয় এবং বেঙ্গালুরুর আদালতে পেশ করার জন্য ট্রানজিট রিমান্ড নেওয়া হয়।

ভারতবর্ষে এবার নিষিদ্ধ হতে চলেছে আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত অনলাইন গেম। বুধবার, এই বিষয়ক একটি বিল পাশ হয়েছে লোকসভায়। ‘দ্য প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫’ নামের এই বিলে আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত অনলাইন গেমের প্রচারের উপর জরিমানা বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এদিন ১৩০ তম সংবিধান সংশোধনী বিল নিয়ে বিরোধী সাংসদরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তার মাঝেই ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব প্রথমে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। তারপর ধ্বনিভোটে পাশ হয় অনলাইন গেমিং সংক্রান্ত এই বিলটি। বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকেও আর্থিক লেনদেনে যুক্ত অনলাইন গেমের জন্য ফান্ড ট্রান্সফার বা সহায়তা করার উপর বিধিনিষেধ জারির প্রস্তাব রয়েছে নতুন এই বিলে। গত কয়েক বছর ধরেই ভারতে অনলাইন গেমিং ইন্ডাস্ট্রিকে একটি উদীয়মান বিজনেস সেক্টর হিসাবে দেখা হচ্ছে। জানা যাচ্ছে, অনলাইন গেমিং-এর ক্ষেত্রে বাজি ধরার পিছনে প্রত্যেক মাসে ভারতে গড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়।
