আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্মার্টফোনে সঞ্চার সাথী অ্যাপ বাধ্যতামূলকভাবে প্রি-ইনস্টল করার সরকারি নির্দেশ নিয়ে দুই দিন ধরে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক বিতর্ক ও বিরোধিতার পর কেন্দ্র সরকার এই নির্দেশ প্রত্যাহার করল। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রক  জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ছয় লক্ষেরও বেশি মানুষ অ্যাপটি ডাউনলোড করেছেন এবং মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১.৪ কোটিতে পৌঁছেছে। ফলে অ্যাপটি বাধ্যতামূলকভাবে ইনস্টল করার প্রয়োজন আর নেই।

সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সঞ্চার সাথী একটি সাইবার নিরাপত্তা ও সচেতনতা প্ল্যাটফর্ম, যা নাগরিকদের ডিজিটাল পরিচয় রক্ষা, সিম কার্ড জালিয়াতি রোধ, প্রতারণা সনাক্তকরণ এবং ফোন হারালে ব্লক করার সুবিধা দেয়। কেন্দ্র দাবি করেছে, এই অ্যাপে নাগরিকদের ওপর নজরদারির কোনও ব্যবস্থা নেই এবং চাইলে ব্যবহারকারী যেকোনো সময় এটিকে ডিলিট করতে পারবেন।

লোকসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সঞ্চার সাথী দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি সম্ভব নয় এবং আমি চাইলে যেকোনো সময় অ্যাপটি ফোন থেকে সরিয়ে দিতে পারি। গণতন্ত্রে প্রত্যেক নাগরিকের সেই অধিকার আছে।”

তবে সরকারের এই আশ্বাসে বিরোধীরা সন্তুষ্ট নন। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ওয়াদ্রা জানান, “এটি হাস্যকর এবং বিপজ্জনক। শুধু ফোন নজরদারি নয়, পুরো দেশকে নজরদারি রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলছে।” কংগ্রেস সাংসদ কার্তি চিদাম্বরম অভিযোগ করেন, “রাশিয়া, উত্তর কোরিয়ার মতো নজরদারি কৌশল এবার ভারতেও প্রয়োগ করা হচ্ছে।”

উদ্ধব ঠাকরে শিবসেনার সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বলেন, “এটি আরেকটি ‘বিগ বস নজরদারি উদ্যোগ’। এই ধরণের অ্যাপ মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর আঘাত।”

প্রযুক্তি সংস্থাগুলিও এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল, বিশেষত অ্যাপল, যারা নির্দেশের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে জানা গেছে। তাদের আশঙ্কা ছিল, বাধ্যতামূলক সরকারি অ্যাপ ফোন নির্মাতাদের সফটওয়্যার স্বাধীনতা এবং ব্যবহারকারীর পছন্দ সীমিত করবে।

অবশেষে জনমত, বিরোধী রাজনৈতিক চাপ এবং প্রযুক্তি শিল্পের অসন্তোষ বিবেচনায় সরকার সিদ্ধান্ত বদল করতে বাধ্য হলো। তবে এই বিতর্কে স্পষ্ট—ভারতের ডিজিটাল নিরাপত্তা নীতি এখন গোপনীয়তা বনাম রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের এক বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে।