আজকাল ওয়েবডেস্ক: ৩,০৭৩ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মামলায় শনিবার সকালে শিল্পপতি অনিল আম্বানির মুম্বইয়ের বাসভবনে তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা সকাল ৭টা নাগাদ কাফ প্যারেডে সিউইন্ডে আম্বানির বাসভবনে পৌঁছান। সূত্রের খবর, সাত থেকে আটজন আধিকারিক এই অভিযানে রয়েছেন। জানা গিয়েছে, তল্লাশি চলাকালীন অনিল আম্বানি এবং তাঁর পরিবার বাসভবনে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ৪ অগস্ট ইডি এই একই ব্যাঙ্ক প্রতারণা অভিযোগে আম্বানির বিভিন্ন কোম্পানির অফিসে তদন্ত চালিয়েছিল। এমনকী আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইনে অনিল আম্বানিকে ইডি অফিসে তলব করা হয়। সেই মতো অনিল হাজিরাও দিয়েছিলেন ইডি অফিসে।
অনিল আম্বানিদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (এসবিআই)। দায়ের হয়েছে অভিযোগ। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই সিবিআই অনিল আম্বানি, তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে নতুন করে এফআইআর দায়ের করেছে। দিল্লিতে এফআইআর দায়ের করা হয়।
অনিল আম্বানির রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস লিমিটেড (আরসিওএম)-এর বিরুদ্ধে মোট ৩,০৭৩ কোটি টাকার জালিয়াতির অভিযোগ করেছে এসবিআই। এর আগে ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর সংস্থার অ্যাকাউন্ট এবং অনিল ডি আম্বানি-সহ প্রোমোটারদের "জালিয়াত" হিসাবে দেগে দিয়েছিল এবং ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি, সিবিআই-তে অভিযোগ দায়ের করেছিল। তবে, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি, দিল্লি হাইকোর্টের জারি করা "স্থিতাবস্থা" আদেশের কারণে অভিযোগটি ফেরৎ পাঠানো হয়েছিল।
ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক এখন আনুষ্ঠানিকভাবে রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস লিমিটেড (আরসিওএম) এবংতার প্রোমোটার পরিচালক, অনিল ডি আম্বানিকে "জালিয়াত" হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে, অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী শুক্রবার লোকসভায় জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন- দেশের ৩১ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে মমতা এখনও গরিব, কত টাকা রয়েছে তাঁর কাছে, জানাল এডিআর
একটি লিখিত উত্তরে, মন্ত্রী জানিয়েছেন যে, এসবিআই চলতি বছরের ১৩ জুন, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের জালিয়াতি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ নীতির অধীনে এই শ্রেণীবদ্ধকরণ করেছে। প্রকাশের নিয়মের অংশ হিসেবে, RCOM-এর রেজোলিউশন প্রফেশনাল ১ জুলাই, ২০২৫ তারিখে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জকে এই শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে অবহিত করেন।
মন্ত্রীর মতে, RCOM-এর কাছে এসবিাই-এর মোট এক্সপোজারের মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের ২৬শে আগস্ট থেকে তহবিল-ভিত্তিক মূলধনের ২,২২৭.৬৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে রয়েছে ৭৮৬.৫২ কোটি টাকা মূল্যের অঙ্কের সুদ এবং ব্যয়।
আম্বানির নেতৃত্বাধীন টেলিকম সংস্থাটি এই ধরনের পদক্ষেপের মুখোমুখি হওয়ার এটিই প্রথম ঘটনা নয়। এসবিআই এর আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে আরকম এবং অনিল আম্বানিকে "প্রতারক" হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছিল এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সিবিআই-তে অভিযোগ দায়ের করেছিল।
২০২৩ সালের ২৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মোতাবেক, ঋণদাতাদের জালিয়াতি হিসেবে চিহ্নিত করার আগে তাঁদের মামলা উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, এসবিআই ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে শ্রেণীবদ্ধকরণটি উল্টে দেয়। পরে ১৫ জুলাই, ২০২৪ তারিখের আরবিআই সার্কুলার মেনে ব্যাঙ্কটি পুনরায় প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করে এবং অ্যাকাউন্টটিকে 'জালিয়াত' হিসেবে পুনর্বিবেচনা করে।
২০২৫ সালের ২৪ জুন, এসবিআই ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে শ্রেণীবদ্ধকরণটি জানায় এবং বলে যে- তারা সিবিআই-তে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর পরে, সিবিআই এই মামলায় একটি এফআইআর দায়ের করে।
এই মামলাটি ছাড়াও, একাধিক ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মামলায় অনিল আম্বানি সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) উভয়ের নজরে রয়েছেন। সূত্রের মতে, তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির দ্বারা সংঘটিত মোট জালিয়াতির পরিমাণ ১৭,০০০ কোটি টাকারও বেশি।
