আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাইক চালিয়ে যাওয়ার সময় দুই দুষ্কৃতীর ছোঁড়া গুলিতে খুন হতে হল এক বিজেপি নেতাকে। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের কাটনি জেলায়। খুনের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক এবং রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত হামলাকারীদের একজনের বাবা তাঁর ছেলের অপরাধে জড়িত থাকার কথা জানতে পেরে আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে দুই মুখোশধারী ব্যক্তি গুলি চালাচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের নাম নীলু (নীলেশ) রাজক। বয়স ৩৮ বছর। তিনি কাটনি বিজেপি পিচদা মোর্চা মণ্ডলের সভাপতি। মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ কাইমোর শহরে তাঁর বাইক চালিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই মোটরসাইকেলে থাকা দুই ব্যক্তি তাঁর মাথায় ও বুকে গুলি করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা গুলি চালানোর ঘটনার ফলে বিশৃঙ্খলা, এলাকার কাছের বাজারে আতঙ্ক, একাধিক গুলির শব্দ এবং গুলির আঘাতে নীলুর রাস্তায় পড়ে যাওয়ার দৃশ্য বর্ণনা করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হত্যার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শত শত বাসিন্দা রাস্তায় নেমে আসেন এবং খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। নীলুর পরিবার এবং সমর্থকরা বিজয়রাঘবগড় সরকারি হাসপাতালের সামনে রাস্তা অবরোধ করেন। ন্যায়বিচার না হওয়া পর্যন্ত ময়নাতদন্তের অনুমতি দিতে করতে দিতে রাজি হননি তাঁরা। ছয় ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই বিক্ষোভে যোগ দেন বিজেপি বিধায়ক সঞ্জয় পাঠক এবং বিজেপি জেলা সভাপতি দীপক ট্যান্ডন সোনি।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের নাম প্রিন্স (৩০) এবং আকরাম খান (৩৩)। এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রিন্সের বাবা নেলসন জোসেফ এই অপরাধের সঙ্গে তাঁর ছেলের জড়িত থাকার কথা জানতে পেরে আত্মহত্যা করেছেন। কাটনির পুলিশ সুপার (এসপি) অভিনয় বিশ্বকর্মা বলেন, “আমরা অভিযুক্তদের শনাক্ত করেছি। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছি।” তিনি আরও জানান, কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে টিআই (টাউন ইন্সপেক্টর) এবং হেড-কনস্টেবলকে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে।”
আরও পড়ুন: পরিবার পিছু একজনের চাকরি, মহিলাদের আড়াই হাজার! জনমোহিনী অঙ্কেই বিহারে বাজিমাতের চেষ্টা মহাগঠবন্ধনের
বিজেপি বিধায়ক এবং প্রাক্তন মন্ত্রী সঞ্জয় পাঠক অভিযোগ করেছেন যে নীলু একটি ‘লাভ জিহাদ’ মামলায় হস্তক্ষেপ করার কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। সঞ্জয় বলেন, “একটি মেয়ে অভিযোগ করেছিল যে স্কুলে যাওয়ার পথে এক লোক তাকে উত্ত্যক্ত করছে। নীলু বাধা দিলে লোকটি তাঁকে বোমা মেরে মারার হুমকি দেয়। বিষয়টি আরও গুরুতরে হয়ে ওঠে। নীলু থানায় অভিযোগ জানালে পুলিশ উত্ত্যক্তকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে। এরপরেই অভিযুক্তদের নীলুকে হুমকি দিয়েছিল, ‘আমি তোমাকে রাস্তার মাঝখানে গুলি করে মারব’। দেড় মাস পর, সে তাঁর কথা রেখেছে।”
সঞ্জয় আরও দাবি করেছেন, “নীলুর পাঁচ বছরের একটি মেয়ে এবং এগারো বছরের একটি ছেলে ছিল। তাঁর মা বৃদ্ধ। তিনিই ছিলেন একমাত্র উপার্জনকারী। এটি কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি একটি বার্তা। কিছু ব্যবসায়ী, পুলিশ এবং বহিরাগতরা জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে হবে। অভিযুক্তরা আরও বলেছে যে তাঁরা আমাকেও শেষ করে দেবে, কিন্তু আমি হিন্দুত্বের জন্য আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত।”
সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সংঘর্ষ ঠেকাতে জব্বলপুরের ডেপুটি ইন্সপেক্টর অফ পুলিশ অতুল সিং কাইমোরে মার্চপোস্ট করেন। এসপি বিশ্বকর্মা দ্রুত গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি যে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুই প্রধান অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আকরাম এবং প্রিন্সকে খোঁজা হচ্ছে। টিআই কর্তব্যে অবহেলা করেছেন।”
