আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুম্বই ও দিল্লিতে অবস্থিত অনিল ধীরুভাই আম্বানি-নেতৃত্বাধীন রিলায়েন্স গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠানে টানা তিন দিন ধরে তল্লাশি চালাচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন (PMLA)-এর আওতায় এই তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সূত্র অনুযায়ী, ৩,০০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলায় রিলায়েন্স গ্রুপ ও ইয়েস ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

গত ২৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে এখনও পর্যন্ত ৩৫টিরও বেশি স্থানে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে যে ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে রিলায়েন্স হোম ফিনান্স ও সংশ্লিষ্ট গ্রুপ কোম্পানিগুলিকে যে ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তার আগে ইয়েস ব্যাঙ্কের প্রোমোটারদের বিভিন্ন ‘কনসার্নে’ টাকা ঢুকেছে। অর্থাৎ, ‘ঘুষ’ ও ঋণ অনুমোদনের মধ্যে এক যোগসূত্র খতিয়ে দেখছে ইডি।

তদন্তে আরও দাবি করা হয়েছে, ঋণের অনুমোদনে ব্যাঙ্কের নীতির ‘মারাত্মক লঙ্ঘন’ হয়েছে। বিনা ডিউ ডিলিজেন্স বা ঋণ বিশ্লেষণ ছাড়াই ‘ব্যাক-ডেটেড’ (পুরনো তারিখে তৈরি করা) অনুমোদনপত্রের ভিত্তিতে ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। এই ঋণের অর্থ বহু গ্রুপ কোম্পানি ও তথাকথিত ‘শেল কোম্পানিগুলিতে’ স্থানান্তর করা হয়েছে। ইডি সূত্রে জানা গেছে, এই মানি লন্ডারিং কেসটি অন্তত দুটি সিবিআই এফআইআর, এবং ন্যাশনাল হাউজিং ব্যাঙ্ক, সেবি, ন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং অথরিটি (NFRA) ও ব্যাঙ্ক অফ বরোদা-র রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। এসব রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একটি সুপরিকল্পিত স্কিমের মাধ্যমে পাবলিক মানি জালিয়াতি করে ব্যাঙ্ক, বিনিয়োগকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের প্রতারিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধনে অভিবাসী শ্রমিকদের সংকট: তথ্য ও নথির অভাবে ভোটাধিকার হারানোর মুখে লক্ষাধিক পরিযায়ী শ্রমিক

এদিকে, কেন্দ্র সরকার সম্প্রতি সংসদে জানিয়েছে যে, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI) আরকম (RCOM)-কে ‘প্রতারক’ হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেছে এবং সিবিআই-এর কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আরও জানা গিয়েছে, কানাড়া ব্যাঙ্ক ও আরকম-এর মধ্যে ১,০৫০ কোটির ঋণ প্রতারণা নিয়েও ইডি-র তদন্ত চলছে। এছাড়াও, অনিল আম্বানির ‘অঘোষিত’ বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং বিদেশে অবস্থিত সম্পদ সম্পর্কেও খোঁজ নিচ্ছে সংস্থাটি।

সূত্র অনুযায়ী, রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার-এর প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকার ‘এটিওয়ান’ (AT-1) বন্ডের আর্থিক অপব্যবহারের অভিযোগও তদন্তের আওতায় এসেছে। উল্লেখ্য, এই ধরনের বন্ড ব্যাঙ্কগুলি মূলধনের ভিত্তি মজবুত করতে ব্যবহার করে এবং এগুলি তুলনামূলকভাবে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। এই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে রিলায়েন্স গ্রুপের তরফে প্রকাশিত এক হোয়াইট পেপারে জানানো হয়েছে, “যেসব অভিযোগ উঠে এসেছে, তা মূলত ইয়েস ব্যাঙ্ক ও রিলায়েন্স হোম ফিনান্সকে ঘিরে ৮ বছর পুরনো লেনদেন সংক্রান্ত।”

রিলায়েন্স পাওয়ার ও রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার ২৪ জুলাই স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দেওয়া বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইডি-র তল্লাশির ফলে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম, আর্থিক পারফরম্যান্স, শেয়ারহোল্ডার, কর্মী অথবা অন্য কোনও স্টেকহোল্ডারের উপর কোনও প্রভাব পড়েনি। তারা আরও দাবি করেছে, অনিল আম্বানি বর্তমানে রিলায়েন্স পাওয়ার বা রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের বোর্ডে নেই এবং এই দুই সংস্থার রিলায়েন্স কমিউনিকেশন (RCOM) বা রিলায়েন্স হোম ফিনান্সের (RHFL) সঙ্গে কোনও ব্যবসায়িক বা আর্থিক সম্পর্ক নেই। তবে ইডি-র অনুসন্ধান এখনই শেষ নয়। বিশাল অঙ্কের ঋণ, ঘুষ, জাল নথি এবং বিদেশি সম্পত্তির এক জটিল নেটওয়ার্ক উন্মোচনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি—যার চূড়ান্ত রূপ এখনও সামনে আসেনি।