দিব্যা ভারতী, শ্রীদেবী, জুহি চাওলা, মাধুরী দীক্ষিতের মতো বলিউডের তারকা অভিনেত্রীদের কণ্ঠে গান গেয়েছেন আলিশা চিনয়। নয়ের দশকের প্রথম সারির সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন আলিশা। সেই দশকেই ভারতের সঙ্গীতজগতে ‘কুইন অফ ইন্ডিপপ’ নামে পরিচিত হতে থাকেন তিনি। শুধু নিজের গানের অ্যালবামই নয়, হিন্দি ছবিতেও গান করতে শুরু করেন আলিশা। আশির দশকে বাপ্পি লাহিড়ির হাত ধরে ফিল্মপাড়ায় পা রাখেন আলিশা।২০০৫ সালে রানি মুখোপাধ্যায় আর অভিষেক বচ্চন-অভিনীত ‘বান্টি অউর বাবলি’ মুক্তির পর গোটা দেশ ঝড় তুলেছিল সে ছবির গান — ‘কাজরা রে’!
অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বর্যা রাই ও অভিষেক বচ্চনকে নিয়ে তৈরি এই আইকনিক ট্র্যাক তৎকালীন চার্ট বাস্টারে একদম উঁচুতে ছিল. বিয়ে-বাড়ি থেকে পার্টি — সর্বত্র শোনা যেত সেই গানের সুর। আর গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন পপ সেনসেশন আলিশা চিনয়, যিনি এই গানের জন্য জিতেছিলেন সেরা গায়িকা হিসেবে নামীদামি ফিল্মি পুরস্কার।
কিন্তু গানের সাফল্যের পেছনে ছিল এক চমকে দেওয়া গল্প। গায়িকার দাবি, এই গানগাওয়ার জন্য তাঁকে পারিশ্রমিক হিসেবে পাঠানো হয়েছিল মাত্র ১৫ হাজার টাকা! সম্প্রতি,এক সাক্ষাৎকারে আলিশা বললেন,“ ‘কাজরা রে’-এর পর আমি সত্যিই রেগে গিয়েছিলাম। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম—গায়িকাদের কোনও মূল্যই নেই নাকি? তখন আমি ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’-র মতো হিট গানের গায়িকা। তবু শঙ্কর-এহসান-লয়-এর অনুরোধে গানটা গেয়েছিলাম, কারণ ওরা বলেছিল যশ রাজ ফিল্মসের প্রজেক্ট। কিন্তু পারিশ্রমিকের টাকার চেকটা যখন হাতে এল, তখন দেখি টাকার অঙ্কটা মাত্র ১৫,০০০ টাকার! আমি ওঁদের বললাম—‘হ্যালো!’ এত বড় প্রযোজনা সংস্থা, আর পারিশ্রমিক মাত্র ১৫ হাজার টাকা! আমি সেটা নিইনি। ওরা কয়েকবার পাঠিয়েছিল, আমি ফেরত পাঠিয়েছি।’”
এই মন্তব্য তুমুল বিতর্ক ছড়িয়েছিল সে সময়। নিজেই স্বীকার করেছেন,“তখন আমি বেশ সোজাসাপটা ছিলাম, জল মেপে-বুঝে ঠিক কথা বলিনি। মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলাম যে, টাকা দেয়নি। সেটাই বড় বিতর্ক হয়ে গেল।” তবে আজও কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় আলিশা। গায়িকার কথায়, “ওটা ঠিক আচরণ ছিল না। এখন তো আরও খারাপ অবস্থা—অনেক গায়ক নিজেদের মান নামিয়ে ফেলছে। ইন্ডাস্ট্রি ভাবে ওরা আমাদের সুযোগ দিচ্ছে, অথচ গায়কেরাই আসল প্রাণ।”
২০১০ সালে আরেক সাক্ষাৎকারে আলিশা আরও এক বিস্ময়কর তথ্য ফাঁস করেছিলেন। তিনি জানান, বিদেশে নিজের গানের অনুষ্ঠানে যখন “কাজরা রে” গাওয়ার পরিকল্পনা আঁটেন, তখন অনুষ্ঠানের আয়োজকদের তরফে জানতে পারেন — যশ রাজ ফিল্মস নাকি ওই গানের ওপর স্বত্ব দাবি করছে! “আয়োজকরা আমাকে বলেছিল, আমি যদি ‘কাজরা রে’ গাই, তাহলে ওদের প্রযোজনা সংস্থাকে অনেক টাকা দিতে হবে। শুনে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম!”দাবি, আলিশার। তবে ২০০২ সালে যশ চোপড়ার প্রযোজনায় মুক্তি পাওয়া ‘মুঝসে দোস্তি করোগে!’ ছবিতে গান গেয়ে আবার কেরিয়ারে পথচলা শুরু করেন আলিশা।
যাই হোক, এই অভিজ্ঞতার পর আলিশা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেন— “আর বলিউডে গান নয়, যতদিন না গানের স্বত্বের আইন বদলায়।” এমনকী মধুর ভাণ্ডারকর-এর ‘দিল তো বাচ্চা হ্যায় জি’ ছবিতেও গান গাওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি। আলিশা চিনয়—‘মেড ইন ইন্ডিয়া’র নায়িকা থেকে বলিউডের প্রতিবাদী কণ্ঠ।
আজও ‘কাজরা রে’ বাজে, মানুষ নাচে তার তালে—কিন্তু সেই গানের পেছনের এক কণ্ঠ আজও দাবি করে ন্যায্য সম্মানের। বলিউডের অন্যতম তুমুল জনপ্রিয় গানের আড়ালেই লুকিয়ে ছিল এক গায়িকার তীব্র প্রতিবাদ!
এই প্রথম নয়। এর আগে সঙ্গীত পরিচালক অনু মালিকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করেন আলিশা। তার সঙ্গে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ২৬ লক্ষ টাকাও দাবি করেন গায়িকা।আলিশার অভিযোগের পাল্টা অভিযোগ জানান অনুও। আলিশার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ এনে দু’কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন অনু। বেশ কয়েক বছর মামলা চলার পর দু’পক্ষের মধ্যে মিটমাট হয়ে যায়।
