আজকাল ওয়েবডেস্ক: রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ভারতের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি, জানিয়েছে তারা তাদের টেলিকম শাখা রিলায়েন্স জিও ইনফোকম লিমিটেডকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পদক্ষেপে কোম্পানির ৪৪ লক্ষ শেয়ারহোল্ডারের জন্য নতুন দিক উন্মোচিত হবে।


কোম্পানির ৪৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশে চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি বলেন, “আজ আমার গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করতে চাই যে, জিও তার আইপিওর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রয়োজনীয় সব অনুমোদন পাওয়া গেলে আমরা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জিওকে তালিকাভুক্ত করার লক্ষ্য নিয়েছি।

আরও পড়ুন: টাকার দামে রেকর্ড পতন, ধস নামল শেয়ার বাজারেও


এই আইপিও প্রায় এক দশকের ঝড়ো গতির বৃদ্ধিকে তুলে ধরবে যা ভারতের টেলিকম ও ডিজিটাল অর্থনীতিকে আমূল পাল্টে দিয়েছে। ২০১৬ সালে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরুর পর থেকে জিও ৫০ কোটিরও বেশি গ্রাহক অর্জন করেছে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের সম্মিলিত জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। সাশ্রয়ী ডেটা ও বিনামূল্যে ভয়েস কলের সুবিধা দিয়ে জিও ভারতীয়দের জীবনধারা বদলে দিয়েছে। জিওর নেটওয়ার্কই ভারতের ইউপিআই পেমেন্ট বুমের ভিত গড়ে তুলেছে এবং ডজন ডজন ইউনিকর্ন স্টার্টআপের উত্থান সম্ভব করেছে। জিও বিশ্বের দ্রুততম ৫জি রোলআউট তৈরি করেছে, এবং তাদের লক্ষ্য স্মার্ট হোম, এন্টারপ্রাইজ ডিজিটাইজেশন এবং কনজিউমার এআই পরিষেবায় সম্প্রসারণ।


আম্বানি জানিয়েছেন, জিওর রোডম্যাপে রয়েছে প্রতিটি ভারতীয় পরিবারকে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করা, স্মার্ট হোম সমাধান চালু করা, বড় প্রতিষ্ঠান থেকে ছোট ব্যবসাকে ডিজিটাল রূপান্তর করা এবং “সবার জন্য সর্বত্র এআই” উদ্যোগের নেতৃত্ব নেওয়া। 


২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোম্পানির রাজস্ব দাঁড়িয়েছে ১.২৮ লক্ষ কোটি এবং ইবিটিডা হয়েছে ৬৪,১৭০ কোটি। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে বিশ্ব বিনিয়োগকারীরা সরাসরি ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী টেলিকম অপারেটরে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন এবং রিলায়েন্স গ্রুপ স্তরে বিশাল মূল্য উন্মোচিত হবে।


এই পদক্ষেপ রিলায়েন্সের বিকাশযাত্রার সর্বশেষ অধ্যায়। গত ছয় বছরে আম্বানি তেল-টু-কেমিক্যালস জায়ান্টকে এক ভোক্তা-প্রযুক্তি শক্তিধর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেছেন। ফেসবুক, গুগল এবং বিভিন্ন সার্বভৌম তহবিলসহ একাধিক কৌশলগত অংশীদার ২০২০ সালে জিও প্ল্যাটফর্মসে একসঙ্গে ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছিল। একই সময়ে রিলায়েন্স খুচরা ব্যবসা, নতুন জ্বালানি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় সম্প্রসারণ করেছে, পাশাপাশি আম্বানি পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মকে নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।


আম্বানির জন্য, জিওর তালিকাভুক্তি শুধু আর্থিক মাইলফলক নয়। এটি একটি প্রতীকী পদক্ষেপও, যা একদিকে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মূল্য উন্মোচন করবে। অন্যদিকে রিলায়েন্সের ভবিষ্যৎকে ডিজিটাল, ভোক্তা এবং এআই-চালিত ব্যবসার ভিত্তিতে স্থাপন করবে।


এদিন শুরু থেকেই একেবারে হালকা মেজাজে দেখা যায় মুকেশ আম্বানিকে। তিনি এদিন সরাসরি জানিয়ে দেন ভারতের উন্নতিতে তার প্রতিষ্ঠান আগেও কাজ করেছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা তারা বজায় রাখবেন। সেখান থেকে যদি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন। এরফলে কোটি কোটি ভারতীয়র পাশে থেকে তারা আগামীদিনে এই উন্নয়নের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।