আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঋণের কিস্তি বা ইএমআই নিয়ে চিন্তা বহু মানুষেরই। ঋণ নিলে তা শোধ তো করতেই হবে। যার নির্যাস, অনেকেরই রোজগারের একটি বড় অংশই চলে যায় ইএমআই শোধ করতে। চাকরি টলমল হলেও ইএমআই মিস করলেই বিপদ। কিন্তু অনেক সময় এমন কিছু আর্থিক বিপদ আসে, তখন অনেকের ইএণআই মিস হয়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে ক্রেডিট স্কোরে। অচিরেই ডিফল্টার বা ঋণখেলাপির তালিকায় চলে যায়। যার নির্যাস, বেশি সুদে বাড়তি ইএমআই দেওয়া, ক্রেডিট স্কোর খারাপ হওয়া ও ভবিষ্যতে ঋণ পেতে সমস্যা হওয়ার মতো একাধিক অসুবিধা।
এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হল, আর্থিক বিপদ এলে ইএমআই কোনওভাবে মাসে মিস হয়ে গেলে ডিফল্টার বা ঋণখেলাপির তকমা এড়িয়ে কীভাবে বিপদ এড়ানো সম্ভব। এই উপায়টি হল লোন মোরাটোরিয়াম।
লোন মোরাটোরিয়াম কী?
 
 লোন মোরাটোরিয়াম হল সাময়িক ভাবে ইএমআই স্থগিত রাখা। আর্থিক বিপদ এলে ইএমআই কিছু মাস স্থগিত রাখা যায়। তাতে ডিফল্টার লিস্টে নাম ওঠে না। ঋণগ্রহীতা খানিক রেহাই পান। তবে, লোন মোরাটোরিয়ামের শর্ত নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট সংস্থার উপরে। এছাড়াও কী ধরনের ঋণ, কত ইএমআই দেখা হয়। এছাড়াও কী পরিস্থিতিতে মোরাটোরিয়াম আবেদন, যেমন মেডিক্যাল এমার্জেন্সি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা আর্থিক মন্দা ইত্যাদিও দেখা হয়। মোরাটোরিয়াম নিলে ক্রেডিট স্কোরে কোনও প্রভাব পড়ে না। 
কীভাবে লোন মোরাটোরিয়ামের জন্য আবেদন করতে হয়? 
 
 ঋণগ্রহীতাকে ঋণপ্রদানকারী সংস্থার কাছে এর জন্য আবেদন করতে হয়। কেন মোরাটোরিয়াম চাই, তার জন্য প্রমাণ-সহ যুক্তি দিতে হয়। অর্থাত্, কোনও আর্থিক বিপর্যয়, মেডিক্যাল এমার্জেন্সি, চাকরি চলে যাওয়া, ব্যবসায় বড় ক্ষতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি। মোরাটোরিয়ামের আবেদন যদি অনুমোদন পেয়ে যায়, তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার জন্য ঋণগ্রহীতাকে ইএমআই দিতে হয় না। কয়েক মাসের জন্য ইএমআই স্থগিত রাখা হয়। কতটা বিপদ, তার উপর ভিত্তি করে সাধারণ একমাস থেকে ১২ মাসের সময়সীমায় মোরাটোরিয়াম পাওয়া যায়। 
কীভাবে মোরাটোরিয়ামের সুদের হার ধার্য করা হয়? 
 
 মোরাটোরিয়াম বা ঋণস্থগিতের সময়েও সুদ জমতে থাকে। অর্থাৎ, আপনি যদি এই সময় কিস্তি না দেন, তাহলেও ঋণের মূল টাকার ওপর সুদ চালু থাকে। ফলে সাময়িকভাবে আপনি কিস্তির চাপ থেকে মুক্তি পেলেও, দীর্ঘমেয়াদে আপনার ঋণের খরচ বা বোঝা অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। মোরাটোরিয়াম শেষ হলে আবার পুরনো নিয়মে কিস্তি দিতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, যাঁরা এই সময় কিস্তি বন্ধ রেখেছিলেন, পরে তাঁরা বেশি সুদের কারণে ঋণের মেয়াদ বা শর্ত বদলাতে বাধ্য হন। 
অর্থাত্, লোন মোরাটোরিয়াম সাময়িক স্বস্তি দেয় ঠিকই, কিন্তু পরবর্তীকালে সুদ-সহ তা ফেরৎও দিতে হয়। যদি ওই নির্দেষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণগ্রহীতার বিপদ না কাটে, তাহলে তিনি মোরাটোরিয়ামের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করতে পারেন। কত দিনের মোরাটোরিয়াম, তার উপরে নির্ভর করে সুদের হার।
মোরাটোরিয়াম পাওয়ার যোগ্যতা কী?
 
 মোরাটোরিয়াম পেতে গেলে প্রথমে আবেদন করতে হয়। কেন মোরাটোরিয়াম চাইছেন, তার প্রমাণও দিতে হয়। কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে মোরাটোরিয়াম মঞ্জুর করে ঋণদানকারী সংস্থাগুলি। চাকরি চলে যাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মেডিক্যাল এমার্জেন্সি, ব্যবসায় বড় অঙ্কের ক্ষতি-সহ নানা কারণে মোরাটোরিয়াম পাওয়া যায়। 
অতএব আর্থিক বিপদ এলে আপনিও মোরাটোরিয়ামের আবেদন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু মাস ইএমআই-এর চাপ থাকে না। সেই কিস্তির টাকা বিপদে বাঁচাতে পারে। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে, মোরাটোরিয়াম নিলে তার সুদ-সহ টাকাও ফেরত দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে বেশি টাকা ফেরতও দিতে হয়।
