আজকাল ওয়েবডেস্ক: এসআইআরের কাজ নিয়ে জটিলতা বাড়ছে দিনের পর দিন। নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষের জন্য কার্যত চাপ দেওয়া হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের তরফে। অথচ পরিকাঠামোয় হাজারও ত্রুটি। ফলে খুব দ্রুত কাজ মুশকিল। আর এই পাহাড়প্রমাণ চাপের কাছে হার মানতে বাধ্য হচ্ছেন বহু বিএলও। অতিরিক্ত কাজের চাপে কেউ কেউ আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন। সুইসাইড নোটে তাঁরা স্পষ্ট করে লিখে যাচ্ছেন এসআইআর-এর কাজের চাপই তাঁদের এই চরম সিদ্ধান্তের কারণ। ধারাবাহিকভাবে এমন মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি।
শনিবার এক্স (X) হ্যান্ডেলে পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, “এসআইআরের চাপে এভাবে আর কত জীবন নষ্ট হবে? আর কত মৃতদেহ গুনতে হবে? বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর আকার নিচ্ছে।” তিনি আরও লেখেন, “কৃষ্ণনগরের চাপড়ার ২০১ নম্বর বুথের বিএলও, পার্শ্বশিক্ষিকা রিঙ্কু তরফদারের মৃত্যুর খবর অত্যন্ত মর্মান্তিক। তিনি সুইসাইড নোটে স্পষ্ট লিখে গিয়েছেন এসআইআর-এর অতিরিক্ত কাজের চাপ তাঁকে ভেঙে দিয়েছে।”
মমতা ব্যানার্জি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দাবি করেন, অবিলম্বে এই পরিস্থিতির সমাধান করতে হবে। না হলে আরও প্রাণহানি থামানো যাবে না বলে সতর্ক করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, নদিয়ায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেন এক মহিলা বিএলও। মৃতের নাম রিঙ্কু তরফদার। বয়স আনুমানিক ৫৪ বছর। তিনি পেশায় পার্শ্বশিক্ষক ছিলেন এবং চাপরা বাঙালি স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যা মন্দিরে পড়াতেন।
পাশাপাশি নদিয়ার চাপড়া ২ নম্বর পঞ্চায়েতের ২০১ নম্বর বুথে বিএলও–র দায়িত্ব পালন করতেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষ্ণনগরের ষষ্ঠীতলা এলাকায় স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতেন রিঙ্কু। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে নির্বাচন কমিশন চালু করেছে এসআইআর বা বিশেষ নিবিড় সংশোধন। যার অংশ হিসেবে বিএলওদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমারেশন ফর্ম বিলি করতে হচ্ছে। যদিও পরিবারের দাবি রিঙ্কু তরফদার পেশায় পার্শ্বশিক্ষক হলেও অনলাইনে খুব একটা সড়গড় ছিলেন না। আর তা নিয়ে মানসিক চাপে ভুগছিলেন। অভিযোগ, এই অতিরিক্ত দায়িত্ব এবং মানসিক চাপের কারণে রিঙ্কু গত কয়েকদিন ধরে অস্বস্তিতে ভুগছিলেন।
পরিবার ও প্রতিবেশীদের মতে, তিনি কাজের চাপ নিয়ে প্রায়ই দুশ্চিন্তায় থাকতেন। ঘটনার দিন রাতেও স্বামী–স্ত্রী স্বাভাবিকভাবেই ঘুমাতে যান। কিন্তু শনিবার ভোরবেলায় ঘুম ভাঙার পর রিঙ্কুর স্বামী দেখতে পান স্ত্রী পাশে নেই। বাড়ির ভেতরে খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে তিনি পাশের ঘরে রিঙ্কুর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় কোতোয়ালি থানায়। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে। যেখানে রিঙ্কু নির্বাচন কমিশনকে তার মানসিক চাপের জন্য দায়ী করেছেন বলে জানা গেছে। এই খবর জানাজানি হতেই কৃষ্ণনগর জুড়ে আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সহকর্মী থেকে শুরু করে প্রতিবেশীদের অনেকেই জানিয়েছেন, নির্বাচন সংক্রান্ত বাড়তি দায়িত্ব প্রায়ই বিএলওদের উপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করছে। যার ফলে অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। তবে সুইসাইড নোটের সত্যতা ও ঘটনার পেছনের প্রকৃত কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। কোতোয়ালি থানার পুলিশ জানিয়েছে, তারা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
