রবিবার ০৬ অক্টোবর ২০২৪

সম্পূর্ণ খবর

উত্তর সম্পাদকীয় | আন্দোলনের নাড়ি বুঝতে পারেন তিনি, কেবল তিনিই! মমতা ব্যানার্জি এবারেও বোঝালেন, তিনি প্রতিবাদের ফসল

Riya Patra | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬ : ০৮Riya Patra



রিয়া পাত্র


শনিবারের সকাল। তুমুল বৃষ্টি কলকাতা-সহ জেলায় জেলায়। ত্রিপলের তলায় বসে প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। আচমকা সেখানে হাজির হলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। যে চৌকিতে বসে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধেই স্লোগান উঠছে, সেখানেই বসে পড়লেন। সকলকে বুঝিয়ে বললেন, বৃষ্টিতে ভিজবে না। বললেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, আন্দোলনকারীদের মাঝে এসেছেন দিদি হিসেবে। বললেন, আন্দোলনের বিপক্ষে তিনি নন। তীব্র আন্দোলন আর স্লোগানের মাঝে দাঁড়িয়ে যিনি একথা বলতে পারেন, তিনি মানুষের পালস বোঝেন না? 


কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন, ৩৪ বছরের বাম শাসনকে ভেঙেছেন, বিজেপি চালিত এনডিএ জোটের কার্যত কোমর ভেঙে রেখেছে যে ইন্ডিয়া জোট, তার অন্যতম প্রধান মুখও তিনি। রাজ্যে এই মুহূর্তে ঘটে চলা ঘটনা প্রবাহের পর, অনেকেই বলছেন, তিনি নাকি মানুষের পালস বুঝতে পারছেন না। ভোটের প্রচারে যাঁকে সামনে রেখে স্লোগান ছিল, 'বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়', এবং রাজনীতির সহজ সমীকরণেই বোঝা যায়, যাঁর প্রধান ইউএসপি 'গার্লস টু দ্য নেক্সট ডোর' তিনি নাকি আর ঘরের মেয়ে হয়ে থাকা দূরের কথা, তিনি তাঁর ঘরের বাকিদের ক্ষোভ বুঝতে পারছেন না।  গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিতে যে কোনও প্রশ্ন উঠতেই পারে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যাঁকে নিয়ে এই প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের প্রচণ্ড অস্থির পরিস্থিতিতে, তাঁর সরকারের বিরুদ্ধেই উঠে আসা বিপুল ক্ষোভের মাঝে তিনি কী বলছেন? রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মনে করাচ্ছেন, তিনিও আন্দোলন করে উঠে এসেছেন। শুধু এই একটা লাইনে তিনি আদতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, এই প্রবল আন্দোলন, কিংবা গণআন্দোলনের রূপ নিতে চলা এই আন্দোলনের মূল সুতো মমতা ব্যানার্জি ধরে ফেলেছেন আগেই। 


৯ আগস্ট আরজিকরে তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য। আন্দোলনের রেশ রাজ্যের, এমনকি দেশের বাইরেও। রাত দখল, রাস্তা দখল, অবস্থান বিক্ষোভ। একটু ভাল করে দেখলেই বোঝা যাবে কয়েকটি বিষয়- 
যেমন, এই আন্দোলন কেবল এবং একমাত্র আরজি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে নয়। কেউ, কেউ বলছেন, এই আন্দোলন মানুষের জমে থাকা ক্ষোভের প্রকাশ। শাসক দলের অন্দরেই এই প্রশ্ন উঠছে, মানুষ এত ক্ষেপে কেন গেল? কেন এই কথা? তার উত্তর হিসেবে বলা যায়, যখন একজন মানুষ আন্দোলনে পা মেলান, তিনি সবার আগে ভাবেন, কেন যাচ্ছি, স্বার্থ কী? যেমন একই সঙ্গে ভাবেন কার সঙ্গে যাচ্ছি। একেবারে তৃণমূল স্তরের বিভিন্ন সমস্যা অনেকের মাথায় এসেছে। তার অনেককিছু হয়ত শাসক শিবিরের শীর্ষ স্তর অবধি পৌঁছয় না। বেশ কয়েকটি আন্দোলনে গেলেই, স্লোগান শুনলেই বোঝা যাবে, আরজি কর অনেকক্ষেত্রেই কেবল একটা স্ফুলিঙ্গের কাজ করেছে। তার প্রেক্ষিতে মিছিলে মিছিলে ভরে গিয়েছে শহরের দিন-রাত, রাজপথ-দেওয়াল। মিছিল হয়েছে অদলীয়, অরাজনৈতিক এবং পতাকার নিচে প্রবল রাজনৈতিক। মুখ্যমন্ত্রী কি এই স্ফুলিঙ্গের আঁচ পাননি?


এই প্রসঙ্গে পরপরের ঘটনাক্রমের উল্লেখ প্রয়োজন-
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই ঘটনার পর, বেশ কয়েকবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন। শুরু থেকেই তিনি বলেছেন, দোষীদের সাজা চান, চান সর্বোচ্চ সাজা, ফাঁসি। বলেছেন আন্দোলনের বিপক্ষে নন। আর একটু খেয়াল করা যাক, 'বৈঠক'-এর সময়কাল। ১২ সেপ্টেম্বর, বৈঠকের জন্য বসে থেকেছেন। যখন বারবার নানা শর্তে বৈঠক সফল হয়নি, ১৪ সেপ্টেম্বর, শনিবারের সকালে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান সটান হাজির হয়েছেন ধর্না মঞ্চে। বসে পড়েছেন চৌকিতে, যেখান থেকেই তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠছে অহরহ। গিয়ে কী বললেন? বললেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, তিনি দিদি হিসেবে গিয়েছেন। অনুরোধ করলেন আন্দোলনকারীদের বৃষ্টিতে না ভেজার। আবার বৈঠকের ডাক, আবার বিফল। কালীঘাটে তিনি বাড়ির বাইরে এসে আবার বললেন, বৃষ্টিতে না ভিজতে। আবার বৈঠক, সেই বৈঠক সফল। সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বরের বৈঠক শেষে মমতা যখন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, আন্দোলনকারীদের প্রায় সব দাবি তিনি মেনে নিয়েছেন, তখন ১৭ তারিখ হয়ে গিয়েছে। মমতা রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে পরপর ঘোষণা করলেন, সরিয়ে দেবেন কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে, সরিয়ে দেবেন ডিসি নর্থকে, সরিয়ে দেবেন স্বাস্থ্য দপ্তরের স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে। যখন গুঞ্জন, মমতা আসলে দলহীন, পতাকাহীন, গণদাবি-আন্দোলনের পালস পাননি, ঠিক তখন মমতা আবার মনে করালেন, 'আমি আন্দোলন করেই উঠে এসেছি।'
এখান থেকেই আদতে ঘুরে যায় বাকিটা।  


তার আগে বলা যাক, আন্দোলন করে উঠে আসা মমতার কথা। কংগ্রেসের নেত্রী, সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মমতা হাত শিবিরের হাত ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করলেন ১৯৯৮ সালে। ঠিক তার কয়েক বছর আগে, সময়টা ১৯৯৩। নদিয়ার ফেলানী বসাকের মুক ও বধির মেয়ের যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটে।  ফেলানী যোগাযোগ করেন কংগ্রেসের নেত্রী মমতার সঙ্গে।  ওই দাবিকে সামনে রেখে, সঙ্গে আরও কিছু দাবি নিয়ে মমতা হাজির হয়েছিলেন রয়টার্সে। তীব্র আন্দোলন দেখেছিল সেদিন শহরের রাজপথ। ২১ জুলাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাম সরকারের পুলিশ গুলি চালিয়েছিল, প্রাণ যায় ১৩ জন কংগ্রেস কর্মীর। মমতার আন্দোলন সেদিন ব্যাপক মাত্রায় মিশে গেল ট্রাম লাইনে, রাজপথে, বাস ডিপোয়।  তার কয়েকবছর পর মতানৈক্য নিয়ে দল ছাড়েন মমতা। তৈরি হয় তৃণমূল কংগ্রেস। কংগ্রেস নেত্রী মমতার আন্দোলনের আঁচ আরও বাড়ালেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা।  ২০০৫ পরবর্তী বাংলার সময়ের দিকে তাকালে দেখা যাবে বামেদের কফিনে কীভাবে শেষ পেরেক দিয়েছিলেন তিনি। ২০০৬ সাল, বাম জমানার রক্তক্ষরণের সূচনাকাল। ওইবছরই সিঙ্গুরে শুরু হয়েছিল কৃষিজমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলন। ওই বছরই ঘটল তাপসী মালিকের ঘটনাও।  রাজনীতির নীতি কখন তাবড় নেতাদের প্যাঁচে ফেলে তা সকলে বুঝতে পারেন না, একথা বোঝা যায় বাংলার রাজনীতিতেই। কারণ ওই ২০০৬ সালেই ২৯৪ আসনের বিধানসভা নির্বাচনে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা ২৩৫টি আসন জিতেছিল বামফ্রন্ট। ‘ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা’ নেতাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ বিমুখ করে, এক্ষেত্রেও তার অন্যতা হল না, আর সেই সুযোগ কাজে লাগালেন বিরোধী দলনেত্রী মমতা। সেবার ভোট জিতে ফের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন বুদ্ধদেব।  বুদ্ধদেব নানা বিষয়ে চিরাচরিত বাম ভাবনার বদল আনতে চেয়েছিলেন। ক্ষমতায় ফিরেই তিনি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন, 'কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত'-কে। বঙ্গে শিল্পের জোয়ার আনতে, টাটা সিঙ্গুরে গাড়ি তৈরির কারখানা তৈরি করবে বলে ঘোষণা করেন তিনি। বিধানসভায় লবিতে জানান, টাটা আসছে বাংলায়। দিনে দিনে আঁচ বাড়ল আন্দোলনের।  আন্দোলন শুরু হল সমাজের একেবারে খেটে খাওয়া শ্রেণির ভিতর থেকে। বললেন জমি দেবেন না।

বিরোধী নেত্রী হিসেবে গেলেন মমতা। পালস বুঝলেন। মানুষের পাশে দাঁড়ালেন ব্যক্তি মমতা। রাজনীতির ফায়দা  তুললেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা। সিঙ্গুরে ধর্না দিলেন টানা ১৪ দিন। অন্তত ১৪টি ক্যাম্প করা হয়েছিল সেখানে। কারা রইলেন মমতার আন্দোলনের পক্ষে? শুধু কি তৃণমূলের নেতা নেত্রীরা? না। রইলেন কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ। তৃণমূল সমর্থকের থেকে বেশি রইলেন বাম-বিরোধীরা। মমতা দেখলেন, গণ আন্দোলনের চেহারা, স্ট্রাকচার। দেখলেন তার জন্ম, পরিধি বিস্তারের পাটিগণিত, বীজগণিত। বুঝলেন আন্দোলন তৈরি হয় কীভাবে, কে কে কখন আন্দোলনে যোগ দেন। দেখলেন, আন্দোলনে কে কখন, কোত্থেকে মুড়ি, নারকেলের নাড়ু, আলু-পটল পৌঁছে দেন। সময় আর জায়গা বদলে গেলেও, সেই স্ট্রাকচার যে বদলায়নি, গত একমাস ধরে রাজ্যের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বিলক্ষণ বুঝেছেন তা। 


শুধু সিঙ্গুরে নয়, টানা ২৬ দিন কলকাতায় অনশন করলেন তিনি।  ২৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন বিরোধী নেত্রীকে মেরে বার করে দেওয়াও হয়েছিল বিডিও অফিস থেকে। ততদিনে মানুষ ভরসা রাখতে শুরু করেছেন মমতার উপর। অন্যদিকে বুদ্ধদেব আওড়াচ্ছেন ‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০।'  ধর্মতলায় ভিড় বাড়ল মমতার পাশে। দিল্লি থেকে এলেন নেতানেত্রীরা। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কী করলেন?  ২০০৬-এর ২০ ডিসেম্বর তাঁকে একটি চিঠি দেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মমতাকে চিঠিতে লিখেছিলেন, 'মাননীয়াসু, এখনও পর্যন্ত ৯৯৭ .১১ একর জমির মধ্যে ৩৪ একর খাসজমি-সহ ৯৫৪ একর জমি হস্তান্তরের সম্মতিপত্র আমরা পেয়েছি৷ জমির মূল্য বাবদ ৮৫ কোটি টাকার চেক এ যাবৎ ৯,৫০০ জনকে দেওয়া হয়েছে৷ এখনও স্বীকৃতিপত্র জমা পড়ছে ও চেক বিলি চলছে৷ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে সালি জমির ক্ষেত্রে ১২.৭৬ লাখ টাকা প্রতি একরে এবং সুনা জমির ক্ষেত্রে ১২.৭৬ লাখ টাকা প্রতি একরে৷ নথিভুক্ত বর্গাদারদের জমির ক্ষতিপূরণ মূল্যের শতকরা ২৫ ভাগ টাকা আলাদাভাবে দেওয়া হয়েছে৷ ইচ্ছার বিরুদ্ধে একজন কৃষকেরও জমি নেওয়া হয়নি৷ দেশের কোনও রাজ্যে এই ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নজির নেই৷' কিন্তু মমতা যখন মুখ্যমন্ত্রী, তখন কী করলেন? নজির গড়লেন অন্যভাবে। তিনি গিয়ে দাঁড়ালেন ধর্নার মাঝে। এই ঘটনা চিকিৎসক আন্দোলনে প্রথম, তেমনটাও নয় ।

 ২০০৭ সালের কথা উল্লেখ করা যাক, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হল ১৪ জনের। বিরোধী নেত্রী মমতা তত দিনে আন্দোলনের স্ট্রাকচার বুঝে গিয়েছেন, বুঝে গিয়েছেন মানুষের পালস। তৎকালীন সরকার কী করল? যা কিছু করল, তার মাঝে যেটা করেনি কখনওই, বিরোধী নেত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া মমতা সেটাই করেছেন বারবার। সময় নিয়েছেন, বুঝেছেন এবং প্রবল বিক্ষোভের মাঝে দাঁড়িয়েছেন।


সোজা চিকিৎসক আন্দোলনের প্রসঙ্গেই আসা যাক।  চিকিৎসক আন্দোলনের সরাসরি মুখ এই মুহূর্তে যাঁরা, তাঁরা প্রায় অনেকেই কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলে যুক্ত। যদিও তাঁরা বলছেন, তাঁদের আন্দোলন মানুষের স্বার্থে, অদলীয়। কিন্তু একেবারেই শুরুতেই মমতা  স্পষ্ট করেছেন আন্দোলনে রাজনীতির কথা। তারপরেও মমতা যেদিন ধর্না মঞ্চে এলেন, মাঝে রয়েছে আর কয়েকটা দিন। দিনে দিনে বিক্ষোভ যত বেড়েছে, তত বেশি তীব্র হয়েছে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভ-স্লোগান। তাহলে মমতা কী করলেন এতদিন? একসময়ের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর মতো কি চিকিৎসকদের ধর্না ‘ডান্ডা মেরে ঠান্ডা’ করার নির্দেশ দিলেন?  


না। তিনি দেখলেন। দেখলেন এক দশক পরে সিঙ্গুরের ক্যাম্প আন্দোলনের সঙ্গে স্বাস্থ্যভবনের সামনে ত্রিপলের ছাউনির নিচের স্লোগানের কোনও বদল হয়েছে কিনা! দেখলেন যে আন্দোলন করে তিনি উঠে এসেছেন, সময়ের সঙ্গে বদলে গেল কি তা? দেখে বুঝলেন, এবং তারপরেই খেললেন মাস্টারস্ট্রোক। সাংবাদিক সম্মেলনে হাতজোড় করলেন, গলা ধরে এল। প্রবল বৃষ্টি মাথায় ছুটে গেলেন ধর্না মঞ্চে, বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে রইলেন, মাঝরাত পর্যন্ত বৈঠক করলেন। মমতা কি তাহলে এই প্রথম তাঁর এই তুরুপের তাস ‘মাস্টারস্ট্রোক’-কে বাইরে এনে ফেললেন? একেবারেই না। আবার একটু সময়সরণী উল্লেখ করা যাক। ২০১৪ সাল। 'হোক কলরব'-এ উত্তাল কলকাতা। একেবারে আচমকা আন্দোলনের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন, এবং কয়েকমিনিটে হাতে এনে দেন সমাধান ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর ইস্তফা’। কাট টু, ২০১৯, এনআরএস কাণ্ডেও আন্দোলনের মাঝে গিয়ে উপস্থিত হন, তাঁর সঙ্গে কথার পর আন্দোলন তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। তারপর আবার ২০২৪। 


অন্যদিকে, মমতা বারবার আরও একটা কথা বললেন। বললেন, ‘বাংলাদেশ হতে দেব না’। এই কথাও প্রমাণ করে, তিনি পালস ঠিক কতটা বুঝতে পেরেছেন। এমনিতেই এই আন্দোলন লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, আন্দোলন থেকে প্রাথমিক প্রক্রিয়া, সবকিছুতেই স্পষ্ট ছিল ওপার বাংলার ছাপ। শুধু বদলে গেল পুলিশের ভূমিকার জায়গাটা। মমতার সরকার এপার বাংলায় আবু সইদ কিংবা মুগ্ধকে তৈরি হতে দিল না। পুলিশ মার খেল, চোখ নষ্টের পথে একজনের, স্লোগান উঠল, ‘পুলিশ তুমি চিন্তা কর, তোমার মেয়েও হচ্ছে বড়।‘ পুলিশ চিন্তা করল, উত্তর দিল, কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায়। বাকি সব রইল নিয়ন্ত্রণে। 


‘আমরা কারা, রাজাকার-রাজাকার’-এর একেবারে একই স্বরে ‘আমরা কারা, আরজি কর, আরজি কর’ শোনার পরেও কেন আবু বা মুগ্ধ তৈরি হল না এপার বাংলায়? কারণ, মমতা জানেন, প্রশাসন, ভোটের রাজনীতি এবং পপুলিস্ট রাজনীতি কোথায় মিলিয়ে দিতে হয় আর কোথায় হ্যাঁচকা টান মেরে আলাদা করে দিতে হয়। কয়েক দশকে চিকিৎসকদের মতোই তিনি চোখ বন্ধ করেই রাজনীতিতে মানুষের পালস কখন কোন দিকে, তা খুঁজে পান এবং মানুষের পালস তিনি যতবার বুঝতে পারেন, ততবার বুঝিয়েও দেন, আন্দোলনের মুখ নানা হলেও, তৃণমূলে মুখ একটাই। সেটা মমতা।


আসলে চুপ থাকার সময়ে, তিনি হিসেব করেন কলকাতা বাকি শহরের থেকে কতটা নিরাপদ। ওটাই পালস।


#Mamata Banerjee#bengal politics#Bengal CM#TMC#Protesr#Singur#Nandigram



বিশেষ খবর

নানান খবর





রবিবার অনলাইন

সোশ্যাল মিডিয়া



09 24