শনিবার ১২ অক্টোবর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Moumita Basak | ০৭ আগস্ট ২০২৪ ১৭ : ০১Moumita Basak
আজকাল ওয়েবডেস্ক: 'মাতৃভূমির সেবায় লোহার মতো মাংসপেশী আর ইস্পাতের মতো স্নায়ুর অধিকারী যুবকদের একত্রিত করো', ছাত্র যতীন্দ্রনাথকে এই নির্দেশই দিয়েছিলেন বিবেকানন্দ। স্বামীজির সাক্ষাতে বদলে গিয়েছিল যতীনের জীবনের গতিপথ। পরবর্তী সময়ে এই যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ই হয়ে উঠেছিলেন ব্রিটিশদের ত্রাস বাঘা যতীন।
দেশকে স্বাধীন করতে একের পর এক ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবের অন্যতম কান্ডারি ছিলেন যতীন্দ্রনাথ। 'আমরা মরব জগত জাগবে', যতীন্দ্রনাথের আহ্বানে সেইসময় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন হাজার হাজার যুবক। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ভারতে তীব্র হয়ে উঠেছিল জনজাগরণ।
১৯০৫ সালে বাংলা ভাগের প্রস্তাব কার্যকর করেন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন। ইংরেজদের পদক্ষেপের বিরোধিতায় পথে নামেন বাঘা যতীন। দেশজুড়ে শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। ক্রমবর্ধমান আন্দোলনের জেরে বঙ্গভঙ্গর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় ব্রিটিশ শক্তি।
১৮৭৯ সালে অবিভক্ত বাংলার কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। কম বয়সেই পিতৃহারা হন যতীন। অকুতভয় যতীন্দ্রনাথ তৈরির নেপথ্যে ছিল তাঁর মা শরৎশশী দেবীর ভূমিকা। ছোটবেলা থেকেই সাহসী এবং ডাকাবুকো বলে নামডাক ছিল যতীনের। একটা মাত্র ছুঁরি নিয়ে বাঘের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন যতীন।
স্কুল শেষ করার পর কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজে ভর্তি হন যতীন্দ্রনাথ। সেইসময় যতীনকে বিবেকানন্দের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সিস্টার নিবেদিতা। ভগিনী নিবেদিতা আয়োজিত এক ত্রাণ শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন ছাত্র যতীন্দ্রনাথ। সেদিন যতীন দেখেই স্বামীজি বুঝেছিলেন, ব্রিটিশ শক্তিকে কাঁপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই কিশোর। ভবিষ্যতে অক্ষরে অক্ষরে ফলে গিয়েছিল স্বামীজির অনুমান।
নির্ভীক যতীনের আত্মমর্যাদা ও জাতীয়তাবোধ ছিল অত্যন্ত দৃঢ়। পরবর্তী সময়ে ঋষি অরবিন্দর বৈপ্লবিক কাজকর্মের ডান হাত হয়ে ওঠেন যতীন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুবকদের প্রশিক্ষণ দিতে একটি গোপন নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল অরবিন্দ। তারই প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন যতীন। দেশের সীমা পেরিয়ে যুগান্তর পার্টির শিকড় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকাতেও বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন যতীন্দ্রনাথ। ঠিক সেইসময় আলিপুর বোমা মামলায় গ্রেপ্তার হন যতীন। ১১ মাস কারাগারে কাটানোর পর উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে মুক্তি দেওয়া হয় যতীনকে।
এরপর পুরোদমে চলতে থাকে বাঘা যতীনের বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নিবেদিত প্রাণ হয়ে ওঠেন বাঘা যতীন। জার্মান থেকে আসা অস্ত্র হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় সহযোগীদের নিয়ে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জে আস্তানা করেন যতীন। গোপনে সেই তথ্য পেলে অভিযানে নামেন ব্রিটিশরা। ব্রিটিশ অভিযানের খবর পেয়ে পায়ে হেঁটে ময়ূরভঞ্জ থেকে বালাসোর পৌঁছন যতীন ও দল।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বুড়িবালাম নদীর তীরে চার সহযোগী নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন যতীন। সেইসময় চারদিক থেকে ঘিরে পাঁচ বিপ্লবীর ওপর আক্রমণ করে ইংরেজরা। প্রায় দুই ঘণ্টার গুলির লড়াই শেষে বুলেটের আঘাতে গুরুতর জখম হন যতীন্দ্রনাথ। ১০ সেপ্টেম্বর, বালাসোরে প্রয়াত হন বীর বিপ্লবী বাঘা যতীন। সেইসঙ্গে শেষ হয় ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের আরও এক গৌরবময় অধ্যায়।