প্রায় এক যুগ পরে ফের পাশাপাশি দেব এবং শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। জায়গা, দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চ। কারণ, তাঁদের অভিনীত আপাত শেষ ছবি ‘ধূমকেতু’ ছবির মুক্তি পাওয়া বা প্রচার ঝলক অনুষ্ঠান। আর গোটা ঘটনার সাক্ষী থাকল এই জুটির অনুরাগীদের থিকথিকে ভিড়। এবং অবশ্যই সমাজমাধ্যমে অনুষ্ঠানের লাইভ সম্প্রচার দেখতে থাকা দর্শক। সোমবার সকাল থেকেই নজরুল মঞ্চের বাইরে রাস্তা ছিল ভিড়ে ঠাসা। প্রেক্ষাগৃহের দরজা খুলে দিতেই এক লহমায় তা ভর্তি হয়ে যায় দর্শকে। এরপর প্রেক্ষাগৃহে আলাদাভাবে ঢুকলেও মঞ্চে একসঙ্গে হাজির হন দেব-শুভশ্রী। চারিদিকে শুধুই চিৎকার। এরপর গান, খুনসুটি চলার পাশাপাশি শুরু হয় ‘ধূমকেতু’ নিয়ে কথা। এবং অবশ্যই পরস্পরকে নিয়েও। সেই সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে দর্শকাসনে বসা রঘু ডাকাত-এর পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে প্রশ্ন ভেসে আসে, " তোমাদের ভেবে যদি ছবির চিত্রনাট্য লিখি, জুটি বেঁধে আসবে?"  শোনামাত্রই শুভশ্রী মঞ্চ থেকেই সজোরে বলে ওঠেন -" প্লিজ, লেখো। অবশ্যই করব!" পাশে দাঁড়ানো দেব-ও স্মিত হেসে শুভশ্রীর কথায় সম্মতি জানান।

 

 

তাহলে কি সত্যিই ‘রঘু ডাকাত’-এর পরিচালক দেব-শুভশ্রী জুটিকে নিয়ে ছবি করার জন্য ইতিমধ্যেই চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছেন? ‘সোনাদা’-র মতো থ্রিলার না কি ‘গোলন্দাজ’, ‘রঘু ডাকাত’-এর মতো পিরিয়ড ড্রামা - কেমন হতে পারে সেই ছবির ঘরানা? তা জানতেই কোনও গুঞ্জন, ফিসফাসে কান না দিয়ে সরাসরি ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছিল আজকাল ডট ইন। 

 


প্রশ্ন শুনে অল্প হেসে উঠলেন পরিচালক। সামান্য থেমে থেমে বলে উঠলেন, “দেখুন, সেই অনুষ্ঠানের আবহটাই এমন ছিল, তাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমার মুখ থেকে ওই প্রশ্ন বেরিয়ে এসেছিল। সত্যি বলতে কী, এইমুহূর্তে দেব-শুভশ্রীকে নিয়ে ছবি তৈরির কোনও পরিকল্পনা নেই। কিন্তু হ্যাঁ, যদি কোনওদিন সুযোগ পাই অবশ্যই ওঁদের নিয়ে ছবি করতে চাইব। আর কেনই বা চাইব না? অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসেবে গত কয়েক বছরে এই দু’জন যেভাবে নিজেদের গড়েপিটে নিয়েছেন, তা এককথায় অবিশ্বাস্য! পারফর্মার হিসেবে যেভাবে পোক্ত হয়েছেন তা নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয়। আর এইমুহূর্তে দেব-শুভশ্রীর মতো জনপ্রিয়তা আর ক'জনেরই বা রয়েছে বলুন? উপরি পাওনা, এই জুটি নিয়ে দর্শকের চাহিদা!"

 

খানিক চুপ করে থেকে '’গোলন্দাজ’-এর পরিচালক ফের বলে উঠলেন, “দেবের সঙ্গে দু’টো ছবিতে কাজ করেছি। অভিনেতা হিসেবে ওঁর উত্তরণ দেখেছি, রেঞ্জ জানি। ওঁকে আমি নিজে বলেছি, তোমাকে ছোট ক্যানভাসের ছবিতে আমি অন্তত ভাবতে পারি না। আর ওদিকে, শুভশ্রীর সঙ্গে কাজ না করলেও ওঁর কাজ আমি মন দিয়ে দেখেছি। একদিকে শুভশ্রী অভিনীত ‘পরিণীতা’-কে রাখুন, অন্যদিকে ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ - অভিনেত্রী হিসেবে ওঁর ব্যাপ্তিটা তখন সহজেই অনুমেয়। দেখুন, সহজ করে বলি, বাংলা ছবির ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে এই জুটির আরও ছবি করা প্রয়োজন যেমন তেমন একজন পরিচালক হিসেবেও চাইব এই দুই পোক্ত অভিনেতার জুটি একসঙ্গে পারফর্মেন্স।”

 

দেব-শুভশ্রীকে নিয়ে ছবি করলে কেমন হবে তার ঘরানা? জবাব এল - “সমসাময়িক সময়েরও হতে পারে আবার পিরিয়ডও হতে পারে। ওই যে বললাম, এখনই সেসব নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, ছোটখাটো কিছু হবে না। ছবির স্কেলটা অনেক বড় হবে। কারণ এঁরা যে মাপের অভিনেতা, তাঁদের জন্য ছবির স্কেলটাও তো বড় হতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, যদি ছবিটা করেন, সেটা হবে বড় স্কেলের—না কোনও ‘স্মল বাজেট ড্রামা’, না কোনও তড়িঘড়ি বানানো গল্প। 

‘ধূমকেতু’-তে প্রচারের আড়ালে যে ঝলকে গেল সম্ভাবনার ইঙ্গিত—তা কিন্তু বাংলা ইন্ডাস্ট্রির কাছে একটা পুনর্জন্মের সম্ভাবনা। এবং যদি হয়, তাহলে একদশক বাদে ফের সেই ‘চ্যালেঞ্জ’ যুগলের নয়া যুগলবন্দি হতে চলেছে এক নতুন পটভূমিকায়, এক নতুন পরিচালকের চোখে।
এবার অপেক্ষা শুধু ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলম ধরার।