আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লি পরিবহন কর্পোরেশনের (ডিটিসি) এক বাসে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। উত্তর-পশ্চিম দিল্লির রোহিনিতে চলন্ত বাসের ভিতরে এক মহিলা যাত্রীকে লক্ষ্য করে নিজের ব্যক্তিগত অঙ্গ প্রদর্শন করে চোখে মুখে কু-ইঙ্গিত করার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি বাসের মার্শালের অভিযোগে ও একটি ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে, যা ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

 

ভিডিওতে দেখা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম জাকির, যিনি কাঁদছেন এবং বাসের মার্শালের জেরার মুখে রয়েছেন। জানা গেছে, জাকির মূলত বিহারের বাসিন্দা, বর্তমানে উত্তর-পূর্ব দিল্লির খাজুরি এলাকায় থাকেন এবং কাজের জন্য বিজয় বিহার এলাকায় এসেছিলেন। বাসের মার্শাল সন্দীপ ছিখারা ভিডিওতে জানান, মহিলা যাত্রী সরাসরি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন এবং তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছেন। অভিযুক্তকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি জানার পরই তদন্ত শুরু হয় এবং দায়িত্ব দেওয়া হয় এক মহিলা সাব-ইন্সপেক্টরকে। কিন্তু ভুক্তভোগী, যিনি মন্দোলি এলাকার বাসিন্দা, তিনি পুলিশকে কোনো লিখিত অভিযোগ বা বিবৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে এই মুহূর্তে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “ভবিষ্যতে যদি এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে প্রয়োজনীয় ধারায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

এই ঘটনায় আবারও সামনে এলো জনসমক্ষে মহিলাদের হয়রানির বাস্তবতা এবং নীরবতার সমস্যাটি, যা প্রায়শই বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।

 

 

ভারতে নারী নিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

 

ভারতে নারী নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ নতুন নয়। শহর থেকে গ্রাম, গণপরিবহন থেকে কর্মক্ষেত্র—প্রায় সব জায়গায় নারীরা শ্লীলতাহানি, যৌন হয়রানি, ও সহিংসতার ঝুঁকিতে থাকেন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যৌন অপরাধের অনেক ঘটনাই অভিযোগ হিসেবে নথিভুক্ত হয় না, কারণ ভুক্তভোগীরা প্রায়ই সামাজিক লজ্জা, প্রতিশোধের ভয় বা বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে অভিযোগ করতে দ্বিধা বোধ করেন।

 

আইনের দিক থেকে দেখলে, ভারতীয় দণ্ডবিধিতে (IPC) ৩৫৪, ৫০৯ এবং অন্যান্য ধারায় নারীর শ্লীলতাহানি বা অশ্লীল আচরণের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান আছে। দিল্লি, যা ‘নারীদের জন্য বিপজ্জনক শহর’ হিসেবে কুখ্যাত, সেখানে বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা, প্যানিক বাটন এবং মার্শাল নিয়োগের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে, সচেতনতা, সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তন এবং ভুক্তভোগীর আস্থার পরিবেশ গড়ে তোলা না গেলে এ ধরনের অপরাধ পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব নয়।

 

নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুধু পুলিশি নজরদারি বা আইন কঠোর করাই যথেষ্ট নয়; পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ-সমতার মূল্যবোধ জোরদার করা, অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, এবং গণপরিবহনে নিরাপত্তা কাঠামো উন্নত করা জরুরি। নারীর নীরবতা ভাঙতে হবে, আর সেই সাহসী পদক্ষেপের জন্য সমাজকে ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়াতে হবে। শেষ পর্যন্ত, নিরাপদ ভারত গড়তে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমান অংশগ্রহণ অপরিহার্য।