সোমবার ১৪ অক্টোবর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Pallabi Ghosh | ০৫ জুন ২০২৪ ১৬ : ২৯Pallabi Ghosh
পল্লবী ঘোষ, ঠাকুরনগর: ২০১৯ এর পর ২০২৪। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র ফের গেরুয়া শিবিরের দখলে। শাসক দলের এককালের শক্ত ঘাঁটি ফের হাতছাড়া হওয়ায় মন-মরা তৃণমূলের কর্মী, সমর্থকরা। অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরের জয়ের পরেও শুনশান ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ি চত্বর। মতুয়াদের উচ্ছ্বাস, উদযাপন তো দূরের কথা, প্রার্থীর বাড়ির উঠোনে সামান্য গেরুয়া আবিরও চোখে পড়ল না। ঠাকুরবাড়ির আশেপাশের লোকমুখে শোনা গেল, শান্তনু জয়ী হওয়া সত্বেও এলাকায় গতকাল থেকেই কোনও উদযাপন হয়নি। হয়তো বিজেপির সার্বিক খারাপ ফলের কারণে। ক্যাডাররা এদিক ওদিক ঘুরলেও জবাব পাওয়া গেল না কারও কাছ থেকেই।
বুধবার ভোরে দিল্লিতে পাড়ি দিয়েছেন শান্তনু। দিল্লির সরকার গড়া নিয়ে এনডিএ জোটের বৈঠক রয়েছে। রাজ্যে সবুজ ঝড়, অথচ বনগাঁ-গড় দখল করতে না পারায় স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের। তৃণমূলের পিছিয়ে পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বললেন, 'শান্তনু কীভাবে জিতেছে জানি। এবার বনগাঁ কেন্দ্রে বামেদের প্রার্থী ছিল না। বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীকে বামেরাই ভোট দেননি। সেই ৯০ হাজার ভোট পড়েছে শান্তনুর দলে। এটা স্পষ্ট যে, বামেদের ভোটেই শান্তনু জয়ী হয়েছেন। কারণ, বিজেপি সমর্থকরাই চাননি শান্তনু জিতুন। ভোটের ব্যবধান দেখলেই তা স্পষ্ট। শান্তনুর জয়ে এলাকায় সকলেই থরহরি। গত পাঁচ বছরে যা মিথ্যাচার করেছে, গুন্ডামি করেছে, তারপর আর কেউ ওর উপর ভরসা করেনি। বামেদের ভোট না পেলে ও এবারে ধরাশায়ী হত।' মমতাবালা এও জানালেন, গতকাল রাতে রাজ্যের দুর্দান্ত ফলাফলে ঠাকুরনগরে তৃণমূল কর্মীরা সবুজ আবির খেলে উদযাপন করেছেন। কিন্তু গোটা এলাকায় শান্তনুর হয়ে কেউ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেনি। এতেই স্পষ্ট, তাঁর পাশে দলের সমর্থকরাই নেই।
গত লোকসভায় শান্তনু জিতেছিলেন ১ লক্ষ ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে। এবার কমে ৭৩ হাজার ৬৯৩। শান্তনু ভোট পেয়েছেন ৭ লক্ষ ১৯ হাজার ৫০৫। অন্যদিকে তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস ৬ লক্ষ ৪৫ হাজার ৮১২ ভোট পেয়েছেন। পরাজয়ের পরেও আত্মবিশ্বাস কমেনি বিশ্বজিতের। তাঁর কথায়, '৭টির মধ্যে ৬টি বিধানসভায় খুব সামান্য ভোটের ব্যবধানে আমি পিছিয়ে। বামেদের ভোটেই বিজেপির বাজিমাত। বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ বিশ্বাস মাত্র ৬৫ হাজারের কিছু বেশি ভোট পেয়েছেন। তাহলে বামেদের ভোট গেল কোথায়! পরাজয়ের আর কোনও কারণ থাকলে, তাও খতিয়ে দেখব আমরা।'
আর কী বলছেন জনতা? টোটোচালক থেকে দোকানদার, সাধারণ ঘরণী, গৃহকর্তা, সকলেরই বক্তব্যে উঠে আসছে সিএএ ইস্যু। নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবি তুলেছেন মতুয়ারা।ক্যা কার্যকর হলেও জয়ী সাংসদ এখনও নিজেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেননি। মতুয়াদের অধিকাংশই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে ভয় পাচ্ছেন। তাঁদের মতে, সিএএ, আধার কার্ড বাতিলের মতো ঘটনার প্রভাব পড়েছে ভোট ব্যাঙ্কে।
গতবারের ১৮ আসন থেকে কমে এবার বাংলায় মাত্র ১২টি আসন দখল করতে পেরেছে বিজেপি। তৃণমূলের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের সামনে দিলীপ ঘোষ, অগ্নিমিত্রা পাল, লকেট চ্যাটার্জি, অর্জুন সিংয়ের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীরা মুখ থুবড়ে পড়েছেন। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া বিজেপিকে নিয়েই সংশয়ে রয়েছেন সমর্থকরা। সেখানে শান্তনুর জয়ে আর উদযাপনের মুড হয়নি তাঁদের।