Logo Logo
  • E-PAPER
Logo Logo
  • লোকসভা নির্বাচন ২০২৪
    • লোকসভা নির্বাচন ২০২৪
    • কলকাতা ভোট ২০২৪
    • পশ্চিমবঙ্গ ভোট ২০২৪
    • ভারত ভোট ২০২৪
  • কলকাতা
  • রাজ্য
    • রাজ্য
    • উত্তরবঙ্গ
    • দক্ষিণবঙ্গ
  • দেশ
  • বাণিজ্য
  • বিনোদন
  • খেলা
  • আরও
    • লাইফস্টাইল
    • স্বাস্থ্য
    • পড়াশোনা
    • মতামত
Logo Logo
Logo Logo

  • img

    নির্বাচন ২০২৪

  • img

    কলকাতা

  • img

    রাজ্য

  • img

    ভিডিও

  • img

    বিদেশ

  • img

    বাণিজ্য

  • img

    বিনোদন

  • img

    খেলা

  • img

    লাইফস্টাইল

  • img

    স্বাস্থ্য

  • img

    পড়াশোনা

  • img

    মতামত

Get In Touch

  • [email protected]
  1. আজকাল.in
  2. রবিবার অনলাইন
  3. ০৪ আগস্ট ২০২৪
  4. রবীন্দ্রনাথ: কাল থেকে কালোত্তরে

রবীন্দ্রনাথ: কাল থেকে কালোত্তরে

  • ~ শ্যামলী ভট্টাচার্য

কালের এক অভ্রান্ত টিপছাপ হলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রয়াণের এতগুলো বছর পরেও প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তিনি আলো দিয়ে চলেছেন--

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে কি আদৌ কোন কৃত্রিমতা ছিল? রবীন্দ্র পরিসরের মধ্যে কি আমরা কখনো খুঁজে পাই কোনরকম কৃত্রিমতা? রবীন্দ্রনাথের চিন্তা চেতনার জগতের সঙ্গে যাঁরা সম্পৃক্ত ,সেই পরিমণ্ডলের মধ্যে কৃত্রিমতা আদৌ আছে কি ?-- এইসব প্রশ্নের ভেতরে ঢুকতে গেলে আমাদের প্রথমেই যে জিনিসটা পরিষ্কার করে নেয়া দরকার সেটা হচ্ছে এই যে, কৃত্রিমতা, এই বিষয়টিকে আমরা আদৌ পছন্দ করি না ।মানুষের জীবনে হোক,  সমাজের জীবনে হোক, বৃহত্তর পরিসরে হোক। কোন জায়গায় ই এতোটুকু কৃত্রিমতা থাকুক সেটা কিন্তু একজন কৃত্রিম মানুষও পছন্দ করে না -- এই বোধটাকে যথোচিত মর্যাদা দেওয়া।
অথচ কৃত্রিমতার আবর্তে আমাদের আকীর্ণ হতে হয় ।অনেক সময় ধরনের চিন্তা চেতনার দুনিয়াকে ছেঁচে  ফেলে ,অন্ধকার কালো মেঘে, সে কালো মেঘ আমরা অতিক্রম করতে পারি না ,হয়তো অতিক্রম করবার চেষ্টাও আমরা করি না ,চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত হয়তো সফল হইনা -- এমন একটা অবস্থায় আমরা খানিকটা সংশয়ী হয়ে পড়ি
তাই কৃত্রিমতা ঘিরে রবীন্দ্রনাথ যখন তাঁর ,'শোকসভা ' প্রবন্ধে লিখছেন ;
"সহৃদয় লোকের নিকট কৃত্রিমতা অতিশয় অসহ্য হইয়া থাকে এ -কথা সর্বজনবিদিত। কিন্তু কৃত্রিমতার অনেক প্রকারভেদ আছে। একপ্রকার কৃত্রিমতা ভিত্তিস্বরূপে সমাজকে ধারণ করিয়া রাখে, আর এক প্রকার কৃত্রিমতা কীটের স্বরূপ সমাজকে জীর্ণ করিয়া ফেলে ।
সমাজের প্রতি আমাদের যে সকল কর্তব্য আছে তাহা পালন করিতে গেলেই কথঞ্চিৎ  কৃত্রিমতা অবলম্বন করতে হইবে ।কারণ প্রত্যেকেই যদি  নিজের রুচি ও হৃদয়াবেগের পরিমাণ অনুসারে স্বরচিত নিয়মে সামাজিক কর্তব্য পালন করে তবে আর  উচ্ছৃঙ্খলতার সীমা থাকে না( শোকসভা, রবীন্দ্র রচনাবলী নবম খন্ড , পৃষ্ঠা-- ৫২৯- ৫৩০) ।"
কৃত্রিমতা যে ,' অতিশয় অসহ্য' - একদা স্বীকার করেও একটা বিশেষ অংশের মানুষদের কাছে এই বিষয়টি যে অসহ্য, সেটা বলতে দ্বিধা করেন নি রবীন্দ্রনাথ।কাদের কাছে অসহ্য? রবীন্দ্রনাথের মতে, ' সহৃদয় লোকের নিকট' ।রবীন্দ্রনাথের এই নির্দেশিকা একদিকে সমস্যার সমাধান ।আবার একদিকে সমস্যার ঘূর্ণাবর্তে অবগাহন।
একজন অতিজটিল, কুটিল লোক ও কখন ও কি প্রকাশ্যে নিজেকে ' হৃদয়হীন ' বলে স্বীকার করে? একজন খুনীও তার কৃতকর্মের পিছনে হাজার রকম কুযুক্তির অবতারণা করে ফাঁসির দড়ি এড়াবার জন্যে।
সমাজকে ধারণ করে রাখবার কৃত্রিমতা , সেই কৃত্রিমতা ঘিরে রবীন্দ্রনাথের একটা ইতিবাচক ভাবনা কি আদৌ ছিল? তাঁর এই ,'শোকসভা'  নামক প্রবন্ধ থেকে এমন একটা ভাবনা আমাদের মধ্যে জোরদার হয়ে ওঠে।আমরা একটু অবাকই হয়ে যাই ,যে সহজ সরল অনাবিল আনন্দের সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ আমরা চিনি ,জানি এবং মানি,  সেই রবীন্দ্রনাথ কৃত্রিমতাকে  বিশেষ পর্যায়ে ,সমাজকে ধারণ করে রাখবার একটা উপকরণ  হিসেবে অভিহিত করছেন --এ বিষয়টা আমাদের ঠিক পছন্দ হয় না ।
            আমরা একটু সংশয়ী হয়ে পড়ি। দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ি ।চিন্তিত হয়ে পড়ি। আমাদের মনে হয় ,সাধারণ স্বাভাবিক অবস্থায় কখনোই সমাজকে ধারণ করে রাখবার জন্যে কৃত্রিমতার কোনোরকম আবশ্যকতা ,প্রয়োজনীয়তা--  কোনো কিছুই আদতে থাকতে পারে না ।কৃত্রিমতা সমাজে কখনো কোনো রকম ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ তৈরি করতে পারে এটা সাধারণভাবে আমরা মনে করি না ।
যদিও এই মনে না করাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা অত্যন্ত কৃপণ এবং চতুর ।কারণ ,নিজের স্বার্থে বা কোনো ধরনের ব্যক্তি স্বার্থকে সামাজিক উপকারিতার একটা আবরণ দিয়ে আমরা কৃত্রিমতার আশ্রয় নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় দুবার ভাবি না। আমাদের কাছে কার্যসিদ্ধি টাই হয়ে ওঠে সবথেকে বড় উপায় তাই।
এখানে প্রশ্ন, রবীন্দ্রনাথ কি আদৌ এভাবে কার্যসিদ্ধির জন্য কৃত্রিমতাকে বা তার প্রয়োগের বা বলা যেতে পারে অপপ্রয়োগের কথাই বলতে চেয়েছেন?
রবীন্দ্রনাথ যে কীটের মত সমাজকে জীর্ণ  করে ফেলা কৃত্রিমতা কে কীটের মত  একটা ধ্বংসাত্মক দিকের  কথা প্রকাশ করছেন, সে বিষয়ে কারো মধ্যে কোনো রকমের সংশয় থাকতে পারে না ।সমাজকে, মানুষকে, সভ্যতাকে ছিন্ন করে ফেলবার ক্ষেত্রে কৃত্রিমতার একটা বড় ভূমিকা আছে। রবীন্দ্রনাথ এখানে সেই কৃত্রিমতার কথা জোরের সঙ্গে বলছেন । সেই কৃত্রিমতা যে কখনোই আমাদের মানব জীবনকে ইতিবাচক কোনো বোধে উপনীত করতে পারবে না--  সে কথাও তিনি বলতে কোনোরকম দ্বিধা করছেন না।
তাঁর এই দ্বিধাহীন স্বীকৃতি আমাদের মনের মধ্যে একটা নতুন ধরনের আশাকে জাগিয়ে তোলে। আমরা ভাবতে থাকি, রবীন্দ্রনাথের মত মানুষ যেখানে কৃত্রিমতার বিরুদ্ধে এভাবে জেহাদ ঘোষণা করছেন, সেখানে আমরা যেন কোনো রকম ভাবেই নিজেদের সাধারণ, স্বাভাবিক, সারল্যকে হারিয়ে কৃত্রিমতার বিতত বিতংসে পা না দিই। যদিও এই ভাবনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের মধ্যে নিছক ভাবনাই থেকে যায়। ভাবনাকে বাস্তবায়িত করবার ক্ষেত্রে আমরা কখনোই সেভাবে যত্নবান হই না।
সমাজের প্রতি আমাদের কর্তব্য পালনে অনেক সময়েই আমাদের যে কৃত্রিমতার আশ্রয় নিতে হয়, বা বলা যেতে পারে কৃত্রিমতার আশ্রয় নিতে আমরা বাধ্য হই- অকপটে একথা বলতে রবীন্দ্রনাথের আদৌ কোনো অসুবিধা হয় না। আসলে ' সত্য' , যা যত কঠিন ই হোক, নির্মম ই হোক , অকপটে তাকে তুলে ধরবার প্রশ্নে রবীন্দ্রনাথ কখনো ভাবের ঘরে চুরি করেন নি।
কেতাবী নীতিবোধ বনাম বাস্তবতা-- এই প্রশ্নে রবীন্দ্রনাথ যে কতখানি বাস্তববাদী ছিলেন তা তো তাঁর  এই উক্তির মধ্যে দিয়ে খুব স্পষ্ট হয়ে যায়। কেতাবের স্তরে আমরা কখনো লিখব না, বলবো না যে , জীবনে কৃত্রিমতা আসুক বা কৃত্রিমতার একটা উপযোগিতা আছে আমাদের ব্যক্তি জীবনে বা সমাজ জীবনে। কিন্তু যখন আমরা কঠিন কঠোর বাস্তবের সামনে এসে দাঁড়াবো ,তখন কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে কিছু কৃত্রিমতার প্রয়োগের দরকার হয়ে পড়ে ।
সেখানে যদি আমি কৃত্রিমতা বর্জিত অনাবিল সারল্যের পরিচয় দিই , তাহলে সেই সারল্য কিন্তু আমাকে এক ধরনের সংকটের মধ্যে টেনে এনে  ফেলতে পারে ।সেই সংকট থেকে হয়তো কখনো ব্যক্তি জীবনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। আবার বৃহত্তর ক্ষেত্র হলে সেই সংকট থেকে সামাজিক সংকট তৈরি হতে পারে।
তাই সেই চাণক্যের শ্লোকের মতো অপ্রিয় সত্য না বলবার যে বাস্তবতার পাঠ আমাদের ব্যক্তিজীবনে একান্তভাবে অনুকরণীয় ,সেই জায়গা থেকে দাঁড়িয়েই কিন্তু রবীন্দ্রনাথ কোনোরকম কৃত্রিম সিদ্ধান্তে আদৌ উপনীত হতে চাইছেন না। এই বাস্তববোধের কারণেই রবীন্দ্রনাথ হলেন জীবনশিল্পী ।নিজে যেটা বিশ্বাস করেছেন ,জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে, মেধা দিয়ে,  অনুধ্যান দিয়ে নিজের যে উপলব্ধি, তার বাইরে কখনো চাপিয়ে দেওয়া একটা অক্ষর তিনি লেখেননি বা উচ্চারণ করেননি।
                    রবীন্দ্রনাথকে যাঁরা রক্তমাংসের ব্যক্তি হিসেবে দেখতে বা মানতে খুব একটা রাজি নন, সেই সমস্ত মানুষদের কাছে "একপ্রকার কৃত্রিমতা ভিত্তি স্বরূপে সমাজকে ধারণ করিয়া রাখে"- এই শব্দ ঘিরে হয়তো একটা দ্বন্দ্ব, হয়তো একটা সংশয়  তৈরি হবে। কথামালার নীতির শিরোপা জারি ছাড়া, বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা কোনো কথাই বোধহয় রবীন্দ্রনাথ বলতে পারেন না - ওই অংশের মানুষদের অমনটাই মনে হবে।
                    ' কৌশল'  এই শব্দটি বা তার প্রয়োগ  কিন্তু অপরিহার্য এমনটাও যেমন নয়, তেমনি এই শব্দটি একেবারে পরিত্যাজ্য তাও নয়। একজন মানুষ যদি কোনো দুর্বৃত্তের মুখোমুখি হয় ,তাহলে সেই দুর্বৃত্তের হাত থেকে বাঁচবার জন্য,  সে যদি কোনো কৌশল অবলম্বন করে, তখন তো কোনো অবস্থাতেই সেই কৌশলকে পরিত্যাজ্য কোনো বিষয় এমনটা মনে করতে পারা যায় না ।
            চেতনা, চৈতন্য শব্দটির অর্থে যখন 'নারায়ণ'  কে ব্যবহার করছেন শ্রীরামকৃষ্ণ , তখন কিন্তু হাতী নারায়ণের পাশে,  মাহুত নারায়ণের কথা ও তিনি উল্লেখ করছেন ।কোনো মানুষ যদি উন্মত্ত হাতির সামনে প'ড়ে  তাকে ,'নারায়ণ ' বলে মনে করে , নিজেকে সংশোধিত করতে না চায় ,তখন যে মাহুতনারায়ন ,অর্থাৎ;  হাতির যে মাহুত সে যে পথিককে সাবধান করে দিচ্ছে সরে দাঁড়ানোর জন্য ---এই বিষয়টিকেও কিন্তু অবহেলা করা যায় না ।এড়িয়ে যাওয়া যায় না। কারণ ,জীবন হলো মৃত্যুর চেয়েও অনেক বড়। তাই এখানে কৌশল  হিশেবে কখনো কখনো সামাজিক প্রয়োজনে কৃত্রিমতাকে তো অবলম্বন করতে হয় বৈ কী।তা নাহলে একটা বড় সামাজিক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আর সেই সামাজিক ক্ষতির নিরিখে প্রধান ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষ।
এই যে বোধের কথা রবীন্দ্রনাথ বলছেন, সেই বাস্তব  বোধের জন্যই তিনি জীবনশিল্পী।এই বোধ  না থাকলে একজন কবি ,একজন সাহিত্যিক ,একজন দার্শনিক --কখনোই কালের বুকে অভ্রান্ত টিপ চাপ রেখে যেতে পারেনা।
ওই প্রবন্ধেই রবীন্দ্রনাথ বলছেন;'.... প্রত্যেকেই যদি নিজের রুচি ও হৃদয়াবেগের পরিমাণ অনুসারে স্বরচিত নিয়মে সামাজিক কর্তব্য পালন করে তবে আর উচ্ছৃঙ্খলতার সীমা থাকে না।'
সামাজিক কর্তব্য পালনে কথঞ্চিৎ কৃত্রিমতা অবলম্বনে যে কথা রবীন্দ্রনাথ বলছেন -- এটা শুনলে অনেক নীতিবাগীশ  রে রে  করে ছুটে আসতে পারেন  সারল্য বনাম কৃত্রিমতার কিছু বস্তা পচা কথা বলে তারা দাবি করতেই পারেন, রবীন্দ্রনাথ যে কৌশলের খানিকটা প্রতিশব্দ হিসেবে কৃত্রিমতার কথা বলছেন, সেটা আসলে এক ধরনের ধান্দাবাজি ।
            জীবন সম্বন্ধে, মানুষ সম্বন্ধে, সমাজ সম্বন্ধে--  গোটা পারিপার্শ্বিকতা ঘিরে যদি আমাদের সঠিক অনুধাবন না জন্মায় ,তাহলে রবীন্দ্রনাথের কথা কে  ভুল ব্যাখ্যা করতে কখনো কোনো রকম দ্বিধা ওইসব অতি নীতিবাগীশ  লোকেদের হবে না ।কারণ , তারা তো রবীন্দ্রনাথকে রক্তমাংসের মানুষ হিসেবেই মনেই  করে না ।তারা তো মনে করে,  রবীন্দ্রনাথ ঈশ্বর নামক এক এমন মহান শক্তিমান পুরুষ ,যার দ্বারা কখনো কোনো রকম অন্যায় সংঘটিত হতে পারে না। ভুল কথা বলা যেতে পারে না। কোনো রকম কৌশল না নিয়ে  সরাসরি তিনি ঘটনার সামনে দাঁড়াবেন ।যুক্তি দিয়ে ঘটনার মোকাবিলা করবেন, এটা তারা মানতে পারে না। দরকারে মার খাবেন--  মরে যাবেন, তবুও বুদ্ধি দিয়ে ,মেধা দিয়ে ঘটনার মোকাবিলা করার কথা এই অতিরিক্ত নীতিবাগীশ  লোকজনেরা মানতে চাইবে না ।তারা নিজেরা বিপদের সামনে দাঁড়ালে কতখানি ভাবের ঘরে চুরি করবে, সে প্রশ্ন তুলে রেখে বলতে হয়, যেহেতু রবীন্দ্রনাথকে তারা' ভগবান'  বলে মনে করে,  যাকে হীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছিলেন;  'কুলুঙ্গিতে ঠাঁই দেওয়া ', সেই রকম একটি পর্যায়েই  তারা রবীন্দ্রনাথকে দেখতে অভ্যস্ত।
              তাই নীতির এক অদ্ভুত স্বপ্নীল জগতের ভাসতে ভাসতে তারা বাস্তবতাকে অস্বীকার করে ।রবীন্দ্র চেতনার অন্যতম প্রধান প্রতিশব্দই হলো বাস্তবতা ।রবীন্দ্রনাথ আর বাস্তবতাকে অস্বীকার করে, রবীন্দ্রনাথ কোনোদিন, কোনো অবস্থাতে ই তাঁর কোনো ভাবনা চিন্তাকে পরিচালিত করেননি। সেই জন্যই তাঁর প্রয়াণের এতকাল পরেও তাঁর বিভিন্ন ভাবনা ,যেগুলোকে আজও আমাদের মনে হয় যেন, গতরাত্রে বসে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ।
আমরা আমাদের সময়ের কালের পরিধিতে জাগ্রত চেতনার স্ফুরণ  হিসেবে রবীন্দ্রনাথ কে দেখি ।তাঁর সেই লেখা,  তাঁর প্রয়াণের  অব্য বাহিত আগের,' তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করে করি  রহস্য জালে হে ছলনাময়ী'  তাই ই হোক ,বা তাঁর জীবিত অবস্থায় শেষ জন্মদিনের সন্দর্ভ ' সভ্যতার সঙ্কট' ,ইংরেজ চলে গেলে রেখে যাবে কোন্ দীনতার আবর্জনায় এ ভারতকে তারা ফেলে রেখে যাবে -তা ঘিরে তাঁর সংশয়। যে সংশয় তারপর এই ক্ষমতা হস্তান্তর, স্বাধীনতা, এইসব প্রশ্নে  যখন  দেশভাগ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠল, বাঙালিকে বিভক্ত করে ফেলা হলো, তার প্রেক্ষিতে আরো অনেক অনেক বেশি করে প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছিল ।
            আজও যখন আমরা দেশভাগের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে নানান আলাপ আলোচনা করি , সন্দর্ভ  রচনা করি, গল্প- উপন্যাস লিখি দেশভাগকে কেন্দ্র করে ,তখন আমাদের মধ্যে বারবার রবীন্দ্রনাথের সেই ভাগ্যচক্রের খেলায় ইংরেজ এ দেশ থেকে চলে গেলেও ,দীনতার আবর্জনা ফেলে রাখায় ভারতের ললাট লিখন, তা পড়ে যেন আমরা দুঃখের এক অথৈ জলে ভাসতে থাকি।
আসলে আজকে গোটা বিশ্বজুড়ে সামাজিক কর্তব্য পালনে একটা সুনির্দিষ্ট বোধের বাইরে গিয়ে নিজের রুচি আর হৃদয়াবেগকে নানা ধরনের আবরণের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করে দেখতেই আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। আজ সবথেকে বড় যে সংকট আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে  তাহলো,  ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার।
ধর্ম যা ধারণ করে রাখার বিষয়, তাকে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষমতা দখলের একমাত্র উপায় হিসেবে। তাই মানুষ সামাজিক বোধকে কোনো একটা সুনির্দিষ্ট মতাদর্শ মানদন্ডের উপরে স্থাপন করে বিচার করতে আর রাজি হচ্ছে না। মানুষের চেতনা লোককে এমনভাবে পরিচালিত করা হয়েছে,  যেখানে মতাদর্শের জায়গাকে আর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। সেখানে গুরুত্ব পাচ্ছে কেবলমাত্র একাংশের মানুষের তৈরি করে দেওয়া নিজস্ব  রুচি। একাংশের মানুষ যখন তার তার মতো করে নিজের রুচি অনুযায়ী কল্পনা জগত বিস্তার করে ,তখন কিন্তু সেই বিস্তারের ভাবনায়, মানুষের ভালো, সেটা বিশেষ গুরুত্ব পায় না। মানুষের ভালোর জায়গায় এসে ঠাঁই নেই সেই নিজস্ব ভাবনাকে , যারা সেটাকে  সমাজের বুকে গেঁথে দিতে চাইছে সেই  তাদের নিজের ভালোর চিন্তা ।
মানুষ তাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয় ।তাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, তারা নিজেরা ।আর তাদের নিজেদের সেই শখ আল্লাদের বিষয়। বিশেষ করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে তাদের যে কৌশল। সেগুলি সবটাই পরিচালিত হয় তাদের রুচি এবং হৃদয়াবেগকে কেন্দ্র করে,  অবলম্বন করে।
                রবীন্দ্রনাথ এই 'শোকসভা'  নিবন্ধটি রচনা করেছিলেন ১৩০১ বঙ্গাব্দে। ১২৫ বছরের ও বেশি সময়  আগে লেখা এই নিবন্ধের মধ্যে যে আপ্ত বাক্যগুলি রবীন্দ্রনাথ বলে গিয়েছিলেন ,আজ এতকাল পরে, বাংলা তথা ভারত তথা ভারতীয় উপমহাদেশ ,দক্ষিণ এশিয়া সহ গোটা বিশ্বের নানা ধরনের আর্থ- সামাজিক- রাজনৈতিক- সাংস্কৃতিক উথাল পাথালের  পর,  তাঁর সেই আত্মবাক্য গুলির প্রাসঙ্গিকতা এতোটুকু প্লান হয়নি ।
            আজও ১৩০১ বঙ্গাব্দে  লেখা রবীন্দ্রনাথের এই প্রবন্ধটি পড়লে মনে হয়, হয়তো এই যে জুলাই মাসের (২০২৪) শুরুতে বাংলাদেশে আন্দোলনের নামে একটি অরাজকতা সংঘটিত হলো, বহু প্রাণহানি ঘটল , যে রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল, সেই রক্ত স্রোত কে দেখে আমরা গভীর বেদনা অনুভব করলেও ,সেই রক্তস্রোত ঘটানোর পেছনে কি ধরনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছিল, বাংলাদেশ কে আবার পাকিস্তানের ছায়া উপনিবেশে পরিণত করবার জন্য কি ধরনের ষড়যন্ত্র সে দেশের মধ্যে হয়েছে ,সে দেশের বাইরে হয়েছে ,যেগুলি পরিচালনা ক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তির নিজের রুচি সব থেকে বেশি ভূমিকা পালন করেছে --সেগুলি যেন রবীন্দ্রনাথ আজ থেকে ১২৫ -১৩০ বছর আগে মানব সমাজের এই অদ্ভুত অপকৌশল সম্বন্ধে তাঁর মানস চক্ষুতে দেখতে পেয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ বলছেন ;
'যে সকল ভাব প্রধানত নিজের ,যেখানে বহিঃসমাজের কোনো প্রবেশাধিকার নাই, যেখানে মানুষের হৃদয়ের স্বাধীনতা আছে, সেখানে কৃত্রিমতা দোষবহ।'
শান্তিদেব ঘোষ বলতেন রবীন্দ্রনাথকে পরিপূর্ণভাবে না দেখতে পারলে তাঁকে দেখা যায় না ।অনেকটা সেই অন্ধের হস্তি দর্শনের মত ব্যাপার হয়ে যায়।
কৃত্রিমতা ঘিরে রবীন্দ্র মূল্যায়ন করতে গিয়ে যদি এই,' শোকসভা'  নিবন্ধের একদম শুরুর দিকে অংশটিকেই আমরা রবীন্দ্রনাথের আপ্তবাক্য বলে ধরে নিতাম বা মনে করতাম, তাহলে হয়তো এই যে ,'হৃদয়ের স্বাধীনতা ' ঘিরে রবীন্দ্রনাথের যে চিরকালের কাকুতি, তার সঙ্গে এই নিবন্ধের ভাবের একটা বৈসাদৃশ্য আবিষ্কার করে ফেলতাম ।
                 নিজের' ভাবের 'প্রশ্নে রবীন্দ্রনাথের অবস্থান আর নিজের 'রুচি' এবং 'হৃদয়াবেগে'র প্রশ্নে রবীন্দ্রনাথের অবস্থান-' এই দুটোকে কিন্তু আমাদের বিশেষ বিশেষ প্রেক্ষিতে, রবীন্দ্রনাথের বলবার ভঙ্গিমার মধ্যে দিয়ে হৃদয়ঙ্গম  করতে হবে ।তা না হলে আমরা বিষয়গুলির যথার্থ মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারবো না ।এবং রবীন্দ্রনাথকেও ভুল বুঝবো।
উশৃংখলতার সীমা পরিসীমা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ রুচি এবং ভেদাভেগের অবতারণা করেছেন। আবার যখন কৃত্রিমতা কিভাবে 'দোষাবহ' একটি বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে ,তার মর্মমূলে প্রবেশ করবার চেষ্টা করছেন। তখন তিনি খুব জোড়ের সঙ্গেই নিজের ভাবের ক্ষেত্রে' বহির ' সমাজের সঙ্গে একটা লক্ষণ রেখা নির্মাণ করছেন। নিজের ভাব গ্রহণ বা বর্জনের ক্ষেত্রে বহিঃ সমাজ , ভাবনা চিন্তাকে উসকে দিতে পারে। কিন্তু নিজের ভাব গ্রহণের ক্ষেত্রে , সেটা কিন্তু করতে হবে নিজের বিচার বুদ্ধি বিবেকের ওপর নির্ভর করেই ।
এখানে কোনরকম বহিঃসমাজের প্রবেশাধিকার কে রবীন্দ্রনাথ কোনো অবস্থাতেই অনুমোদন করতে পারছেন না ।এই যে বিষয়টা সেটাই কিন্তু রবীন্দ্রনাথের কাছে মনুষ্যের আসছে  হৃদয়ের স্বাধীনতার কথাটাই ।রবীন্দ্রনাথ সব ক্ষেত্রে বারবার বলেছেন  সেই কথাটাই।
নিজের অনুরাগী ,অনুগামীদের ক্ষেত্রে সে বিষয়টিকে প্রভাবিত করছেন না। কিন্তু নিজের অভিমত হিসেবে সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন। আর ভাবি কালের জন্যও চেয়েছেন সেই ভাবনাটাই যেন চিন্তার অনুরণনের ক্ষেত্রে আগামী সময় , একটু ভাবে।
রবীন্দ্রনাথ লিখছেন;
"  কিন্তু মনুষ্য সমাজ এতই জটিল যে ,কতটুকু আমার একাকীর এবং কতখানি বাহিরের সমাজের তাহার সীমা নির্ণয় অনেক সময় দুরূহ হইয়া পড়ে এবং অনেক সময় বাধ্য হইয়া নিজস্ব অধিকারের মধ্য দিয়াও সমাজমুনিসিপ্যালিটির জন্য রাস্তা ছাড়িয়া দিতে হয়।"( ঐ - পৃষ্ঠা-- ৫৩০)।
' সমাজমুনিসিপ্যালিটি' - আজ যখন ,'মরাল পুলিশ ' শব্দটা একটা নতুন শব্দ হিসেবেই কথ্য বাংলাতে ঠাঁই করে নিয়েছে, তখন একশো বছরের ও আগে , রবীন্দ্র সমাজপৌরসভা শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন।

 
 

  • শ্যামলী ভট্টাচার্য
Share Now:
img
আগের পাতা
সমাজসচেতনার পাঠ কবে নেব আমরা?
img
পরের পাতা
জীবন সফরের ইতিবৃত্তান্ত

রবিবারের ক্যালেন্ডার

ম্যাগাজিন

  • img
  • img
  • img

গ্যালারি

Facebook Feeds

Aajkaal.in
Logo
  • Facebook 368K
  • Instagram 9K
  • Youtube 9K

© 2025 Copyright: Vision 3 Global Pvt. Ltd.

  • About
  • Advertise
  • Privacy
  • Contact