শ্রাবণী গুপ্ত: নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর প্রথম ব্রিগেড। শুধু বাম নয়, বাম , কংগ্রেস এবং আইএসএফ মহাজোটের জনসভার। এত মানুষের ভিড়, এত নেতার সমাগম, সেখানে টুকটাক নানা কিছু ঘটবে তা বলাই বাহুল্য। রবিবাসরীয় ব্রিগেডেও তার ব্যতিক্রম হল না।
১) ‘তোমার দেখা নাই...’
ব্রিগেডে এলেন না তেজস্বী যাদব। অথচ এদিনই কলকাতায় এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন। কালীঘাটে গিয়ে দেখা করলেন মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে। ব্রিগেডের বক্তা তালিকায় লালু–পুত্রের নাম ছিল বলেই সূত্রের খবর। বিকেলে সাংবাদিকদের তেজস্বী জানালেন, ‘বাম কংগ্রেস জোটে থাকব কিনা উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে তা
দু’ একদিনের মধ্যেই জানাব’।
২) ‘তুমি বলো, না না তুমি...’
ব্রিগেডের মঞ্চে বক্তা তখন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কালো রঙের স্করপিও নিয়ে ঢুকলেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। সঙ্গে জনতার ঢল। মাঠে জোর আওয়াজ উঠল, ‘ভাইজান জিন্দাবাদ’। বক্তৃতা মাঝপথে থামিয়ে আব্বাসকে অধীর বললেন, ‘আপনি চাইলে এখনই বক্তব্য রাখতে পারেন’। হাত এবং মাথা নেড়ে চেয়ারে বসে পড়লেন আব্বাস।
৩) ‘বসে আছি পথ চেয়ে...’
মূলমঞ্চের ঠিক পেছনে কিঞ্চিৎ ছায়া। সেখানেই চেয়ারে আগাগোড়া বসে রইলেন এক সময়ের দাপুটে সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ। বক্তা না হলেও অনেকেই টুকটাক মঞ্চে উঠেছেন, নেমে এসেছেন। অথচ সেলফি আর হাত মেলানোর আবদার, সংবাদমাধ্যমের ভিড় সব থেকে বেশি যাকে ঘিরে সেই সুশান্ত প্রায় আড়ালে বসেই কাটিয়ে দিলেন পুরো সময়টা। অনেকেই কিন্তু বললেন, দাদা বক্তৃতা করলে জমে যেত। সুশান্ত বললেন, ‘দল চাইলে ভোটে লড়াই করব’।
৪) ‘ঘড়ির কাঁটায় তখন..’
সূর্য একেবারে মাথার ওপরে। ঘড়ির কাঁটার বেলা বারোটা। মুল মঞ্চের সামনে ছোট মঞ্চে গাইতে উঠলেন রাহুল–নীলাব্জ জুটি। ব্রিগেডের প্রচারে "টুম্পা সোনা" প্যারোডি করে ইতিমধ্যেই তাঁরা বিখ্যাত। তবে এদিন চটুল প্যারোডি নয়, ওদের গলায় ছিল সিরিয়াস গান। আসলে এদিন ব্রিগেডে যারা লরি, ম্যাটাডোরে মাইক লাগিয়ে টুম্পা প্যারোডি বাজিয়ে এসেছিলেন তাঁরা প্রায় কেউই এই জুটিকে চেনেন না।
৫) ‘ভাল আর মন্দের দ্বন্দ্ব...’
মঞ্চে বক্তা পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। মঞ্চের পেছনের জটলায় বসে ছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র অধুনা সিপিএম সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। সুবক্তা হিসেবে তার নাম আছে। মন দিয়ে পীরজাদার বক্তব্য শুনছিলেন তিনি। যদিও সাধারণ আইএসএফ কর্মীদের ভিড়ে মাঠের ওই অংশ তখন রীতিমত যুদ্ধক্ষেত্র। আব্বাসের বক্তব্য শেষ হতেই কপালের ঘাম মুছে বিকাশের উক্তি, ‘ভালই বলেছে কিন্তু। সেকুলার বক্তব্য’।
৬) ‘মনের দরজা খুলে দিলাম...’
এদিনের শো স্টপার সবার মতে পীরজাদা। আইএসএফ প্রধানের বক্তৃতা প্রচণ্ড গরমে ঘেমে নেয়ে ক্লান্ত হয়ে থাকা ব্রিগেডকে চাঙ্গা করেছেন। নিজের বক্তব্যে আব্বাস একাধিকবার বাম নেতৃত্তের প্রশংসা করলেন। যেখানে বাম প্রার্থী থাকবে সেখানে নিজের দলের সমর্থকদের রক্ত ঝরিয়ে লড়াই করার আবেদন রাখলেন। কিন্তু মঞ্চে বসে থাকা আর এক জোট সঙ্গী কংগ্রেসের কথা মুখেও আনলেন না। দৃশ্যত বিব্রত অধীর চৌধুরী এবং ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল।
আব্বাস শুধু বললেন, ‘আমাদের দরজা এখনও খোলা আছে’।
৭) ‘আমি সেই মেয়ে....’
২০১৯ এ বামেদের শেষ ব্রিগেডে বক্তৃতা করে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন দেবলিনা হেমব্রম। আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর, শেষ মুহূর্তে মহিলা নেত্রী হিসেবে তাঁর নাম ওঠে বক্তা তালিকায়। জোটের বাধ্যবাধকতায় অনেক বক্তাকে সুযোগ দিতে হয়। সেই হিসেবে প্রাথমিক তালিকায় দেবলীনার নাম ছিল না। এদিনের ব্রিগেডে শেষ বক্তা ছিলেন তিনি। কিন্তু এই গরমে অনেকক্ষণ ধরে মাঠে বসে থাকা জনতা তখন বাড়ির পথ ধরেছে। গ্রামের মেয়ের মেঠো ভাষায় আগুন ঝরানো বক্তৃতা মাঠে মারা গেল, বললেন অনেকেই।
দুপুর রোদে ঝলসে যাওয়া মাঠে এমনই নানান টুকরো মুহূর্ত। যার সাক্ষী থাকল aajkaal.in।
Aajkaal © 2017