সম্রাট মুখোপাধ্যায় • ঠাকরে • পরিচালনা: অভিজিৎ পানসে • অভিনয়ে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি, অমৃতা রাও।
‘ডোন্ট কেয়ার’! যা করেছি, বেশ করেছি! আইন–আদালত চুলোয় যাক!
সিনেমার বিষয়, আর যাঁকে নিয়ে সিনেমা, মানে যাঁর ‘বায়োপিক’, তাদের মধ্যে এমন মিলমিশ খুব কমই দেখা যায়। সেদিক থেকে ‘ঠাকরে’ সিনেমা শুধু বিষয়ের দিক থেকেই নয়, ‘ফর্ম’–এর দিক থেকেও বাল ঠাকরের প্রতি ঋণী।
নমুনা? দেওয়া যাক।
এক, মুম্বইয়ে ছোট ও মাঝারি ব্যবসার দখল থাকুক শুধু মহারাষ্ট্রবাসীর হাতেই। তাড়ানো হোক দক্ষিণীদের। যাদের ‘লুঙ্গি’ বলে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। প্রয়োজনে শারীরিক হামলা, হুমকি, ছুরিমারা— কিছুই বাদ যায়নি। আর গোটাটাতেই নেতৃত্বে বাল কেশব ঠাকরে।
দুই, পাকিস্তানের সঙ্গে মুম্বইয়ের মাঠে ভারতের খেলা যাতে বাতিল হয়, তার জন্য বাধ্য শৈবসৈনিকরা পিচ খুঁড়ে দিয়ে আসছে। জাভেদ মিয়াঁদাদকে এর আগেই ঠাকরে মুখের ওপরে বলে দিয়েছেন, তার কাছে খেলার থেকে সীমান্তের সৈনিকদের জীবনের দাম অনেক বেশি।
তিন, বাবরি মসজিদ ভাঙায় বাল ঠাকরের ইন্ধন ছিল, তা এ ছবি মেনে নিয়েছে। এ অভিযোগে দায়রা সোপর্দ হয়ে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে তাকে, এমন দৃশ্য নিয়েই ছবি শুরু। সেখানে ঠাকরের সাফ জবাব, বুঝে শুনেই তা তিনি করেছেন!
এই তিনটি নমুনাই যথেষ্ট এছবিকে বুঝতে। এক কথায় এ ছবি ঠাকরের যত বিতর্কিত, যত আইন–বর্হিভুত কাজ— সবকটাকেই স্বীকার ও সমর্থন করেছে। আর এখানেই এ ছবি আলাদা এদেশে তৈরি আর পাঁচটা ‘বায়োপিক’–এর থেকে। কারণ এছবিতে মুখ্য চরিত্রকে নির্দোষ প্রতিপন্ন করা হয়। সে জায়গায় এছবি যাবতীয় ব্যাপারেই দুঃসাহসি!
মজার কথা হল, এ ছবিতে বাবরি ভাঙা পর্ব, দাঙ্গা ইত্যাদি থাকলেও বিজেপি–সঙ্ঘ সেভাবে নেই। এক জায়গায় প্রমোদ মহাজন আছেন। কিন্তু আদবানি–বাজপেয়ী–যোশীরা নেই একেবারেই। বরং ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থাকেও সমর্থন করছেন ঠাকরে। ছবির শুরু থেকেই যেন ‘ভিলেন’ মোরারজি দেশাই। জর্জ ফার্নান্ডেজ যেন বিভ্রান্ত। ঠাকরে গৃহিনী মীরাবাই (অমৃতা রাও) এক ঘরোয়া মহিলা হিসাবেই মহিমান্বিত হয়েছেন।
ছবির এসব খামতি অবশ্য ঢেকে গেছে মূল চরিত্রে নওয়াজউদ্দিনের অবিস্মরণীয় অভিনয়ে। ঠাকরের ব্যক্তিত্ব যেভাবে নওয়াজ বের করে এনেছেন, তাতে অবাক হতে হয় এই ভেবে যে, এই চরিত্রে স্বয়ং ঠাকরে অভিনয় করছেন না। আর কয়েক মাস আগেই এই নওয়াজকেই হুবহু ‘মান্টো’ মনে হয়েছিল।