সম্রাট মুখোপাধ্যায়: • পাসওয়ার্ড • পরিচালক: কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় • অভিনয়ে: দেব, রুক্মিনী মৈত্র, পাওলি দাম, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, আদৃত রায়।
থ্রিলার। এবং তার অনুপ্রেরণা বলিউড নয়। একেবারে হলিউড।
ফলে অপরাধের চরিত্র আন্তর্জাতিক। এবং অপরাধের কার্যক্রম তার ‘প্যাটার্ন’ও অতি আধুনিক। সাইবার ক্রাইম। এই ছবির নায়কের ভাষায়, যা ডেকে আনবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আর সে যুদ্ধ হবে দুজন ল্যাপটপের সামনে বসে থাকা মানুষের ভেতর।
আর সে জন্যেই ‘পাসওয়ার্ড’টা মানে সাইবার দুনিয়ায় ঢোকা-বেরনোর চাবিটা সামলে রাখা উচিত আমাদের। এই হল ছবির মোদ্দা কথা।
বাকিটা ‘ডার্ক নেট’ আর এক ‘ডার্ক হ্যারি’ মার্কা রগচটা মারকুটে পুলিশ অফিসার রোহিত দাশগুপ্ত’র (দেব) গল্প। না। সে অবশ্য এফ বি আই-এর বা মার্কিনি কোনও গোয়েন্দা সংস্থার অফিসার নয়। বরং সে কলকাতা পুলিশেরই ডিডি মানে গোয়েন্দা দপ্তরের চাকুরে। যাকে এই সাইবার ক্রাইম রোধের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাঁরা ফর্মুলা ছবি দেখেন তাঁরা জানেন এই ‘বিশেষ দায়িত্ব’ ব্যাপারটা নায়ক পান বিশেষ কোনও ‘কেস’ বা ‘মিশন’ হাতে এলে। এই ক্ষেত্রেও তাই। রোহিতের কাছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশ আসে তাকে ধরতে হবে কুখ্যাত আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থী ‘ওনিয়ন’কে। যার আসল নাম কেউ জানে না। যে একটি গুপ্ত সংঘ চালায় মুখে উৎকট মেক আপ করে। আর এক হাতে ডার্ক নেট, আর অন্য হাতে ড্রাগের ব্যবসা সামলায়। ওনিয়ন (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) একটা ব্যাপারে প্রায় ভগবানের মত। নিজের ডেরায় সামান্য কিছু লোকের সঙ্গে বসে একটা পর্দায় সে সব কিছু দেখতে পায়। তার নিজের লোকেদের কাজকর্ম, শহরের (বা দেশের) সব গোপন ভল্টের ঘরের কর্মকাণ্ড, পুলিশের মিটিং রুম মায় টর্চার রুমের ভেতরে তৈরি হওয়া অতি গোপন পরিকল্পনা! এমন ভিলেন ছেলেবেলার পাল্পফিকশন-এর পাতায় প্রচুর পড়েছি। কমলেশ্বর তেমনই এক ভিলেনকে ফিরিয়ে আনলেন পর্দায়। এমন চরিত্রে খালি কেন যে পমব্রতর মতো একজন অভিনেতা ও একটি মিষ্টি মুখ, তা কে জানে? পরমব্রতর অভিনয় অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। সঙ্গে ‘পাল্পফিকশন’-এর নিয়ম মেনেই ওনিয়নকে একটি ভয়ঙ্কর সঙ্গিনী জুটিয়ে দিয়েছেন কমলেশ্বর। এমন একটি চরিত্রেও পাওলি দাম অপচয় কিনা সে প্রশ্ন উঠবেই।
রুক্মিনী আছেন। তবে তিনি এই ছবিতে দেব অভিনীত চরিত্রের নায়িকা নয়। প্রাথমিকভাবে এক নেগেটিভ চরিত্র আদির (আদৃত রায়) প্রেমিকা। আদৃত এবং রুক্মিনী দুজনেই ভাল অভিনয় করেছেন। অ্যাকশন আছে। সে সব ভালই সামলাবেন দেব জানা কথাই। তাঁর অভিনয়ও ভাল লাগে। তবে খারাপ লাগে ‘টর্চার’-এর দৃশ্যে তাঁর চরিত্রের হিংস্র অতি-সক্রিয়তা দেখে। কলকাতা পুলিশ একটি লুকনো সেলে ইজরায়েলি কায়দায় ‘থার্ড ডিগ্রি’ (নাকি অমানবিক) পদ্ধতি ব্যবহার করে স্বীকারোক্তি আদায়ে, এটা কি যুক্তিযুক্ত? আবার ওনিয়নের হিংস্র হওয়ার পেছনে আছে ভূপালের গ্যাস লিক কাণ্ড, এটা বলাও কি যথাযথ হল? ‘পাসোয়ার্ড’ বাংলা ছবিতে বিষয় ভাবনায় নতুন সন্দেহ নেই। প্রযোজক দেব সন্দেহ নেই নতুন ভাবনার ছবি করতে যথেষ্ট উৎসাহ দেখাচ্ছেন, যা বাংলা ছবির জন্য জরিরু। কিন্তু পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় যথেষ্ট যুক্তির সঙ্গে এই ছবিতে এগোলেন কি? এই প্রশ্ন থাকবেই।