সম্রাট মুখোপাধ্যায়: ইতিহাস আর উদ্দাম কল্পনার ‘বকচ্ছপ’ মিশেলে তৈরি হয়েছে ‘কেশরী’। ঘটনার পর্দা উঠছে, হ্যাঁ একেবারে নাটকের পর্দা ওঠার মতো নাটকীয়ভাবেই এ ছবি শুরু হচ্ছে, ১৮৯৭ সালে। অবিভক্ত ভারত আর আফগানিস্তান সীমান্তে। ইতিহাসে যা তৃতীয় ইঙ্গ–আফগান যুদ্ধ বলে চিহ্নিত ও পাঠক্রম বদ্ধ, তাকেই সিলেবাসের বাইরে এনে ভারত–আফগান যুদ্ধ বানিয়ে দিয়েছেন পরিচালক অনুরাগ সিং। আর তারপর প্রবল জাতীয়তাবাদী আবেগের বারুদ তাতে ঠেসেঠুসে পুরে দিয়েছেন, যাতে বক্স–অফিসে ধমাকাটা করা যায়। তার মানে এ ছবি হিট হলেও বড় হিট হবে না।
আসলে গন্ডগোল হয়ে গেছে দুটো। এক, ফৌজিদের জীবনের যন্ত্রণা দেখাতে গিয়ে যে করুণ গল্পটি ফেঁদেছেন অনুরাগ, তা মর্মস্পর্শী হয় না ফৌজিদের পারিবারিক জীবনের টুকরো–টাকরা দর্শক দেখতে পায় না বলে। সে সব কথার রেফারেন্স আছে ঠিকই ছবিতে, কিন্তু তা বারবার মুখের কথায়, দৃশ্যে নয়। ফলে ব্যাপারটা জমেনি। লম্বা একটা শ্রুতিগ্রাহ্য ফর্দের মতো হয়ে রয়ে গেছে।
দুই, একে তো ইঙ্গ–আফগান যুদ্ধকে ইন্দো–আফগান যুদ্ধ বানিয়ে ফেলাটা বাড়াবাড়ির চূড়ান্ত হয়েছে, তার ওপর আবার প্রতিপক্ষ আফগানরা প্রায় রাক্ষস খোক্ষসের মতো খারাপ। শত্রুকে এতটা কালো দেখানোর চরম অভ্যাস এখন কিন্তু হলিউডও বদলে ফেলেছে। বদলে ফেলেছে র্যাম্বো ঘরানা।
এছাড়া একটা আড়াই নম্বর দুর্বলতা আছে। সেটা হল অক্ষয়কুমারকে সর্বরোগহরবটিকা ভেবে তাঁর কাঁধেই গোটা ছবিরই ভার চাপিয়ে দেওয়া। ভাল চিত্রনাট্যের অভাব। পরোয়া নেই, অক্ষয় আছে। অন্য কোনও তারকা নেই। ডরো মৎ, অক্ষয় আছে। শুধুই অ্যাকশন। ভাবনা কী, অক্ষয় আছে। এ ছবিতে এমন মুহূর্ত প্রায় খুঁজেই পাওয়া যাবে না, যেখানে অক্ষয়কুমার নেই।
হয় যেটা, সেটা হল, ছবির শুরুতেই অক্ষয়, এক শিখ সার্জেন্ট, ব্রিটিশ মিলিটারি ফোর্সের, নির্বাসিত হয় ‘সরগরাহি’ দূর্গে। পদাবনতি হলে এমনটা ঘটে, কারণ এ দূর্গ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম। অক্ষয় মানে ছবিতে যাঁর নাম ঈশা সিং, সে নির্বাসিত হয় ব্রিটিশ উপরওয়ালার নির্দেশ অমান্য করায়। সে আফগান উপজাতিদের সঙ্গে লড়ে এক মেয়েকে বাঁচায়। মনে হচ্ছিল বটে দু–একটি দৃশ্যের ইঙ্গিত ঈশারায় যে ওই মেয়েটির সঙ্গেই বোধহয় প্রেম হবে এবার ঈশা সিংয়ের। কিন্তু তা ঘটে না। বরং এই মেয়েটির গল্প যেমন বিনা প্রস্তুতিতে এসেছিল পর্দায়, তেমনই হঠাৎ করেই আবার উধাও হয়ে যায়। আর সেই জায়গায় আসে ঈশার স্ত্রী (পরিণীতি চোপড়া), যাকে ঈশা গ্রামে রেখে এসেছে। এ ছবির স্পেশাল অ্যাপিয়ারেন্সে পরিণীতিকে দরকার ছিল, না পরিণীতির স্টপগ্যাপ হিসেবে এ ছবিকে দরকারি ছিল বলা সত্যিই মুশকিল। অক্ষয় তেমনই, যেমন সর্বদা। ভাল খারাপ দু ধরনের ছবিতেই বোঝা কাঁধে সমান স্বচ্ছন্দ। আর বাকিটা শুধুই যুদ্ধ–যুদ্ধ–যুদ্ধ! তার আর রিভিউ কবে কোথায় করা গিয়েছে।