মিল্টন সেন, হুগলি: বুধবার সন্ধ্যায় ধারালো অস্ত্র নিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়েছিল হুগলির কোন্নগরের কানাইপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য পিন্টু চক্রবর্তীকে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনার দু’দিন পরেও অধরা অভিযুক্তরা। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। আততায়ীরা বাইরে থেকে এসেছিল সন্দেহ তদন্তকারীদের। 

পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার দিন বুধবার দীর্ঘ সময় আততায়ীরা কানাইপুরেই ছিল। তৃণমূল নেতার গ্যাসের অফিসের পাশে পানশালায় সন্দেহভাজন দু’জনের উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছে সিসিটিভি ফুটেজে। পিন্টুর সঙ্গে কয়েকজনের ছোটোখাটো সমস্যা ছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। তবে সেই সমস্যার কোনওটাই একজনকে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়। একাধিক লোক মিলে গিয়ে খুনের এই পরিকল্পনা করা হয়েছে কি না তাও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে জমি সংক্রান্ত গণ্ডগোল। আবাসন তৈরির সামগ্রী সরবরাহ বা এলাকায় সাট্টার মত বেআইনি কাজের প্রতিবাদ ইত্যাদি। 

আরও পড়ুন: স্কুলের নামে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বন্ধুর বাড়িতে আড্ডা! আর কিন্তু রক্ষা নেই, সঙ্গে সঙ্গে হবে 'ক্যাচ, কট, কট'

এই প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি জানিয়েছেন, তদন্ত দ্রুত গতিতে চলছে। অনেকটাই রহস্যভেদ করা সম্ভব হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হবে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৫ বছর ধরে তৃণমূল নেতা পিন্টু ওরফে মুন্নার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ইস্টবেঙ্গল কর্তা মানস রায়ের। নবগ্রাম পঞ্চায়েতের ফরালপুকুর এলাকায় বাড়ি মানসের। তাঁর পারিবারিক যে কোনও অনুষ্ঠানে ডাক পড়তো পিন্টুর। অনেক সময় নিজের দাদা মনে করে মানসের সঙ্গে নিজের মনের কথা ভাগ করতেন মুন্না। কিন্তু সে চলে যাবার পরে কিছুটা ভারাক্রান্ত হয়ে গিয়েছেন মানষ। তিনি জানিয়েছেন, মুন্না সবসময় তাঁকে সম্মান দিয়ে কথা বলতেন। তাঁর সঙ্গে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল। খুব ভাল ছেলে ছিল পিন্টু। ঘটনার দিন ঘন্টা খানেক আগে তিনি ওই রাস্তা দিয়ে ফিরেছেন। এখনও তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না, সে আর নেই। পিন্টুকে কোনও রাজনৈতিক দলাদলি বা কোন খারাপ কাজ দেখেননি। দেড় মাস আগে তাঁর এক ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। 

মানস জানিয়েছেন, তবে জানুয়ারি মাসের পর থেকে তাঁর মনে হয়েছিল, পিন্টু একটু চিন্তিত ছিল। যাকে তিনি সবসময় হাসিখুশি দেখেছেন, তাঁর মধ্যে একটা চিন্তার ছাপ দেখেছেন। তবে বছর তিন চারেক আগে মুন্না তাঁকে একবার বলেছিল যে তাঁরা কানাইপুরের কয়েকজন মিলে ডানকুনিতে একটা জমি কিনেছিল। সেখানে টাকা পয়সা নিয়ে একটা গণ্ডগোল হয়েছিল। প্রায় ৪-৫ বছর আগের ঘটনা। তারপর থেকেই মুন্নার সঙ্গে গত দু-তিন বছরে এ বিষয়ে আর কোনও কথা হয়নি। বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন মুন্না। কোনও গরীব মানুষ তাঁর কাছে সাহায্যের জন্য গেলে উপকার করতেন। পুলিশ গোটা ঘটনা তদন্ত করছে। তিনি চান দোষীদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হোক। 

গত বুধবার কোন্নগরের কানাইপুর অটোস্ট্যান্ড গ্যাসের অফিসের সামনে দুষ্কৃতীরা এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে মুন্নাকে। এই ঘটনায় দু’দিন পার হয়ে গেলেও এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি স্পেশাল টিম তৈরি করে দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। পুলিশের সন্দেহ বাইরের দুষ্কৃতিদের সুপারি দেওয়া হয়েছিলে খুনের। তার জন্য আগে থেকে রেইকি করেছিল আততায়ীরা। ঘটনার দিন সন্ধায় ঝিমঝিম বৃষ্টিতে রাস্তা ফাঁকা থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পনা সফল করে দুষ্কৃতিরা।

ছবি পার্থ রাহা।