আজকাল ওয়েবডেস্ক: বুধবার রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস ‘ধাতব জৈব কাঠামো’ সংক্রান্ত গবেষণার জন্য সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন এবং ওমর এম ইয়াঘিকে ২০২৫ সালের রসায়নে নোবেল পুরষ্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। বিজয়ীরা একটি বিশেষ আণবিক কাঠামো তৈরি করেছেন যার মধ্য দিয়ে গ্যাস এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ প্রবাহিত হতে পারে। ধাতব জৈব কাঠামো নামে পরিচিত এই কাঠামোগুলির বিভিন্ন ব্যবহার থাকতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে মরুভূমির বাতাস থেকে জল সংগ্রহ করা, কার্বন ডাই অক্সাইড ধারণ করা, বিষাক্ত গ্যাস সংরক্ষণ করা বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার অনুঘটক হিসেবে কাজ করা।

রসায়নের নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান হেইনার লিংকে বলেছেন, “ধাতব জৈব কাঠামোর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, যা নতুন কার্যকারিতা সহ বিশেষ ভাবে তৈরি উপকরণের জন্য অপ্রত্যাশিত সুযোগ নিয়ে আসে।”

আরও পড়ুন: ভারতীয়দের জন্য খারাপ খবর, এই বিখ্যাত দেশে ঘুরতে গেলে দিতে হতে পারে বিপুল কর

রিচার্ড রবসন ১৯৮৯ সালে পরমাণুর অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যগুলিকে নতুনভাবে ব্যবহার করে পরীক্ষা শুরু করেন। তিনি ধনাত্মক চার্জযুক্ত তামার আয়নগুলিকে একটি চার-বাহু অণুর সঙ্গে একত্রিত করেন, যার ফলে সেগুলি একটি সুশৃঙ্খল, প্রশস্ত স্ফটিক তৈরি করে। এটি ছিল অসংখ্য গহ্বরে ভরা হিরের মতো। তবে, রবসন যে অণুতে সম্ভাবনা দেখেছিলেন তা অস্থির ছিল। এই নির্মাণ পদ্ধতির একটি দৃঢ় ভিত্তি প্রদানের জন্য সুসুমু কিতাগাওয়া এবং ওমর ইয়াঘি উদ্যোগী হয়েছিলেন। ১৯৯২ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে, তিন বিজ্ঞানী আলাদাভাবে বিপ্লবী আবিষ্কারের একটি সিরিজ তৈরি করেছিলেন।

?ref_src=twsrc%5Etfw">October 8, 2025

নোবেল ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, “কিতাগাওয়া দেখিয়েছেন যে গ্যাসগুলি কাঠামোর মধ্যে প্রবেশ এবং বাইরে প্রবাহিত হতে পারে এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে ধাতব-জৈব কাঠামোগুলিকে নমনীয় করা যেতে পারে। ইয়াঘি একটি অত্যন্ত স্থিতিশীল ধাতব-জৈব কাঠামো তৈরি করেছেন এবং দেখিয়েছেন যে যুক্তিসঙ্গত নকশা ব্যবহার করে এটিকে পরিবর্তন করা যেতে পারে, এটিকে নতুন এবং পছন্দসই বৈশিষ্ট্য প্রদান করে।”

আরও বলা হয়েছে, যুগান্তকারী আবিষ্কারের পর, রসায়নবিদরা হাজার হাজার বিভিন্ন ধাতব-জৈব কাঠামো তৈরি করেছেন। এর মধ্যে কিছু মানবজাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সমাধানে অবদান রাখতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে জল থেকে PFAS পৃথক করা, পরিবেশে ওষুধের চিহ্ন ভেঙে ফেলা, কার্বন ডাই অক্সাইড সংগ্রহ করা বা মরুভূমির বাতাস থেকে জল সংগ্রহ করা। 
 
নোবেল কমিটির তথ্য অনুযায়ী, সুসুমু কিতাগাওয়া জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রিচার্ড রবসন। আমেরিকার বার্কলেতে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত ওমর এম ইয়াঘি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে মার্কিন মুলুকে পড়াশোনা করলেও ইয়াঘি জন্ম জর্ডনের আম্মানে। এক সময় প্যালেস্টাইন থেকে শরণার্থী হিসাবে জর্ডনে পৌঁছেছিল ইয়াঘির পরিবার। অর্থাৎ কিনা পরিবার সূত্রে বিশ্ববিখ্যাত এই বিজ্ঞানী একজন প্যালেস্তিনীয়। যে প্যালেস্টাইন বর্তমানে ইজরায়েলের সামরিক বাহিনীর হামলায় রক্তাক্ত। প্যালেস্টাইনকে বিশ্বের বহু দেশ এখনও স্বীকৃতি না দিলেও সেই দেশে শিকড় থাকা রসায়নের বিজ্ঞানী ইয়াঘি জিতে নিলেন নোবেল পুরস্কারের মতো সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। পুরষ্কারের অর্থমূল্য ১ কোটি ১০ লক্ষ সুইডিশ ক্রোনা তিন বিজ্ঞানীর মধ্যে সমান ভাবে বণ্টন করা হবে।

(ছবি: বাঁ দিক থেকে, সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন এবং ওমর এম ইয়াঘি)