আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে যাঁদের, বেশ কয়েকটি পাথর ফলকে তাঁদের নাম খোদাই করেই বসানো হয়েছিল আন্দামানের সেলুলার জেলে। তবে সম্প্রতি নজরে এল সঙ্কুচিত হয়ে গেছে সেই তালিকা। আন্দামানের সেলুলার জেল একসময় ঠিকানা হয়ে উঠেছিল ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। ১৮৯৬ সালে এই জেল নির্মাণের কাজ শুরু হলেও তার বহু আগে থেকে (সিপাহী বিদ্রীহের সময় থেকেই) আন্দামানকে বন্দিখানা হিসাবেই ব্যবহার করত ব্রিটিশ শাসকরা।
দীপক রায় নামক এক ব্যক্তি ফেসবুকে সেলুলার জেলের নয়া তালিকার ছবি তুলে ধরেন। সেই নতুন ফলকগুলিতে রয়েছে মাত্র ৫১৩ জন বিপ্লবীর নাম। তাঁর মন্তব্যেই উঠে আসে, এই নতুন তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে চার শতাধিক স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম। এই তালিকা প্রকাশ্যে আসার পরেই রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
দীপকবাবুর মতে, তালিকা থেকে বাদ পড়া স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অধিকাংশই বাঙালি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সারা ভারত থেকেই সেলুলার জেলে সংগ্রামীদের যে বন্দি করা হত, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বাংলা, বিহার এবং আন্দামানের বিচার ব্যবস্থা অনেকটা নির্ভরশীল ছিল কলকাতা হাইকোর্টের ওপরে। ফলে বাঙালিদের এই জেলে দ্বীপান্তর করার প্রবণতাও সেই সূত্রেই ছিল বেশি।
আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই পুরনো তালিকায় প্রতি বিপ্লবীদের নামের পাশে উল্লিখিত ছিল তাঁরা কত সালে এই জেলে বন্দি হয়ে এসেছিলেন। নতুন তালিকায় এই ধরণের কোনো উল্লেখ নেই। বরং ১৯০৯–১৯২১, ১৯২২–১৯৩১ এবং ১৯৩২–১৯৩৮ সাল। এই তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে পুরো সময়সীমাকে। বাদ গেছে ১৯০৯ সালের আগের বিপ্লবীদের নামও। উঠে আসছে এমনটাই। ঐতিহাসিক ও লেখক হামাদি সুবানিও তাঁর একটি প্রবন্ধে এই বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
মনে করা হচ্ছে ২০১৫ বা তার আগেই এই বদল ঘটেছ। কারণ হামাদি সুবানির সেই প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৫ সালে। অর্থাৎ সেই সময়ে কিংবা তার আগেই হয়েছে এই পরিবর্তন। তবে এতগুলো বছর তা চোখ এড়িয়ে গেল কীভাবে, সন্দেহ থেকে যাচ্ছে সে ব্যাপারেই।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালেই এই সেলুলার জেলের পুনর্নবীকরণের কাজ হয়। সেলুলার জেলের নামকরণ করা হয় দামোদর সাভারকারের নামে। সম্ভবত তখনই কি এই তালিকায় বদল আনা হল? যদিও বিষয়টি স্পষ্ট নয় এখনও। বদল হওয়া নতুন তালিকাতেও প্রথমেই রয়েছে দামোদর সাভারকারের নাম। তবে রমেশ মজুমদারের বইয়ে বিবরণ থেকেই উঠে আসে পুরনো তালিকাটি সাজানো হয়েছিল নামের আদ্যাক্ষর দিয়েই। সেক্ষেত্রে দামোদর সাভারকারের নাম তালিকার প্রথমে তুলে আনা হল কেন, সে বিষয়েও কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকেই।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন যাঁরা, তাঁদের নাম এইভাবে বাদ দেওয়া হল কেন, তারই বা যুক্তি কি? কোথাও গিয়ে কি তাঁরা কম প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছিলেন? নাকি তাঁদের গুরুত্ব কম বলেই মনে করল প্রশাসন? জানা নেই। আবার অধিকাংশ বাঙালি বিপ্লবীদের নাম বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা উসকে দিচ্ছে হিন্দি আগ্রাসনের সম্ভাবনাও। ইতিহাস বদলে ফেলতে চাওয়ার এই প্রচেষ্টায় বহু মানুষ সরব হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।