আজকালের প্রতিবেদন: আর দশজনের থেকে তাঁর জীবনটা একেবারেই আলাদা। অনেকে যখন রাতের খাওয়া সেরে ঘুমোনোর তোড়জোড় করেন, তিনি ছুটে যান হাসপাতালে। একদিন, দু’দিন নয়, রোজ। না, তিনি হাসপাতালের কর্মী নন। পৌঁছে যান অন্তত দেড়শো মানুষের খাবার নিয়ে। রোজ খাবার তুলে দেন রোগীদের পরিজনদের হাতে। এটাই তাঁর বহুদিনের রুটিন। হাসপাতাল চত্বরে অনেকেই এক ডাকে চেনেন পার্থ করচৌধুরিকে। বয়স ৫০। পেশায় স্কুলের পুলকার চালক। অনেকে অবশ্য নাম দিয়েছেন ‘হসপিটাল ম্যান’।
এই লকডাউনেও বিরাম নেই। স্কুল বন্ধ। নিজের গাড়িও বন্ধ। উপার্জনও প্রায় বন্ধ। তার পরও রোজ দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার ৩টি সরকারি হাসপাতালের সামনে খাবার নিয়ে ঠিক হাজির হয়ে যান এই হসপিটাল ম্যান। শহরে সরকারি হাসপাতালে দূরের জেলা থেকে অনেকে চিকিৎসা করাতে এসেছেন। লকডাউনে প্রতিদিন যাতায়াতে অসুবিধে, তাই অনেক রোগীর পরিজনরা থেকে যান হাসপাতালে। তাঁদের পাশে দাঁড়াতেই ছুটে আসেন পার্থ। লকডাউনের আগে তাঁর চেনা অনেক হোটেল বেঁচে–যাওয়া খাবার দিয়ে সাহায্য করত। সেই সব হোটেল এখন বন্ধ। এর জেরে এত মানুষের খাবার জোগাড় করা বেশ কষ্টের। তবু হাল ছাড়েননি পার্থ। নিজের মতো করেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। লকডাউনের জন্য রাতের বদলে এখন খাবার বিলি করছেন দুপুরে। পার্থ জানালেন, ‘আগে যাঁরা সাহায্য করতেন, তাঁদের অনেকের দোকান, হোটেল বন্ধ। তাই খাবার জোগাড় করতে সমস্যা হচ্ছে। তবু যতদিন পারব চালিয়ে যাব।’ তিনি আরও জানালেন, ‘লকডাউনে পরিচিতদের সাহায্য এবং নিজের চেষ্টায় প্রতিদিন দুপুরে ৭০ থেকে ৯০ জনের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারছি।’ কোনও দিন ডাল, ভাত, সবজি, ডিম। আবার কোনও দিন মুড়ি, কলা, দুধ, বিস্কুট, কেক তাঁদের হাতে তুলে দিচ্ছেন পার্থ।
৩ বছর ধরে হাসপাতালে আসা রোগীদের পরিজনদের বিনাপয়সায় খাবার দিয়ে আসছেন পার্থ। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা রাত ১০টা বাজলেই ‘হসপিটাল ম্যান’ তাঁর সেকেন্ডহ্যান্ড মারুতি নিয়ে হাজির হাসপাতালে। প্রচারের আড়ালে থেকে নিঃশব্দে। করোনাকে হারিয়ে আবার ছন্দে ফিরবে তিলোত্তমা। আবার রাতে রোগীদের আত্মীয়দের পাশে থাকতে চান হসপিটাল ম্যান।