আজকালের প্রতিবেদন: প্রয়াত চিত্রা দেব। ‘ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল’ এবং ‘ঠাকুরবাড়ির বাহিরমহল’–এর লেখিকা দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ভুগছিলেন বিরল মায়াস্থেশিয়া রোগে। এর ফলে তাঁর শরীরের নিম্নাঙ্গ গিয়েছিল অসাড় হয়ে। কিন্তু এই প্রতিবন্ধকতা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বিছানায় শুয়ে শুয়েই শেষ করেছিলেন জোড়াসাঁকো, পাথুরিয়াঘাটার বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের বিচিত্র জীবনরেখা ‘ঠাকুরবাড়ির বাহিরমহল’। ২০১৬–তে প্রকাশিত এই বইটিই তাঁর জীবনের শেষ বই। সোমবার সকালে তাঁর জীবনাবসান হয়। বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। কেওড়াতলা শ্মশানে অবিবাহিত চিত্রা দেবের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
চিত্রা দেবের জন্ম বিহারের পূর্ণিয়ায় ১৯৪৩–এ। বিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা বিহারেই। উচ্চশিক্ষা কলকাতায়। বাংলা সাহিত্যে এমএ, পিএইচডি। কর্মসূত্রে ছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার গ্রন্থাগারিক। বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল এবং ইতিহাসে নারীর ভূমিকা ছিল তঁার গবেষণার মূল ক্ষেত্র। ‘অন্তঃপুরের আত্মকথা’, ‘মহিলা ডাক্তার: ভিনগ্রহের বাসিন্দা’–তে তিনি তুলে ধরেছেন উনবিংশ শতকের মহিলাদের সামাজিক অবস্থান। তবে তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয় ‘ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল’ বইটি। চিত্রা দেবের গবেষণা সেই প্রথম আলো ফেলল ঠাকুরবাড়ির পর্দার ওপারে। এই অনন্যসাধারণ বইটির জন্য পেয়েছেন বাংলা আকাদেমি পুরস্কার। গড়িয়া পূর্ণিমা সম্মিলনীও এই বইটির জন্য লেখিকাকে সম্মানিত করে। একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে বইটি। এ ছাড়া পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ–এর চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মশতবার্ষিকী পুরস্কার।
নিজের লেখালেখির সমান্তরালে সম্পাদনার কাজ ছিল তাঁর প্রিয়। তাঁর সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘সরলাবালা সরকার রচনা সমগ্র’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস সমগ্র’ (১ থেকে ১২ খণ্ড), ‘নারীমনের গল্প’, কবিচন্দ্রের ‘মহাভারত’, ‘বিষ্ণুপুরী রামায়ণ’। ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের প্রেমকাহিনী নিয়ে লেখা ‘রাজকীয় প্রেমকথা’ তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য বই। ছড়ার হাতটিও ছিল চমৎকার। ছোটদের জন্য লিখেছেন ‘বুদ্ধদেব কেমন দেখতে ছিলেন’, ‘অদ্ভুত যত হাতির গল্প’, ‘সিদ্ধিদাতার অন্তর্ধান’। অনুবাদ করেছেন প্রেমচন্দর ‘গোদান’, ‘নির্মলা’র মতো বই।