আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য সাম্প্রতিক কিছু রিপোর্টে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। বৈশ্বিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা বার্নস্টেইন তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে যে দেশের শীর্ষ এক শতাংশ ধনী ব্যক্তিদের কাছে মোট সম্পদের প্রায় ৫৯ শতাংশ রয়েছে। এই ব্যক্তিরা মূলত কেবল দু’টি বিনিয়োগ উৎসের উপর মনোনিবেশ করেন। সেখানেই তাঁরা তাদের অধিকাংশ অর্থ বরাদ্দ করে থাকেন। রিপোর্টে তাঁদের ‘অতি ধনী’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অতি উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তি (UHNI) এবং উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তি (HNI)।

বার্নস্টাইনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের অতি ধনীদের প্রায় ৬০ শতাংশ সম্পদ এখনও রিয়েল এস্টেট এবং সোনায় জমা রয়েছে। অতি ধনীদের মধ্যে রয়েছে অতি উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তি (UHNI) এবং উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তি (HNI) এবং ধনী শ্রেণী।

আরও পড়ুন: আর থাকছে না শেখ হাসিনার ‘গণভবন’! চরম সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলল ইউনূস সরকার

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘অতি ধনীদের কাছে প্রায় ২.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সেবাযোগ্য সম্পদ রয়েছে, যার প্রায় ৬০ শতাংশ সম্পদ এখনও রিয়েল-এস্টেট এবং সোনায় জমা রয়েছে’। রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের মোট পারিবারিক সম্পদের মূল্য ১৯.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ১১.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ৫৯ শতাংশ, ধনী শ্রেণীর হাতে রয়েছে।

এক সঙ্গে এই অতি ধনীরা ভারতীয় জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশ। কিন্তু দেশের মোট সম্পদের ৬০ শতাংশ এবং আর্থিক সম্পদের ৭০ শতাংশ তাদের দখলেই রয়েছে। অতি ধনীদের হাতে থাকা ১১.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে মাত্র ২.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সরাসরি ইক্যুইটি, মিউচুয়াল ফান্ড, বিমা এবং ব্যাঙ্ক বা সরকারি আমানতের মতো পরিষেবাযোগ্য আর্থিক সম্পদ হিসাবে জমা রয়েছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, বাকি ৮.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার রিয়েল এস্টেট, সোনা, প্রোমোটার ইক্যুইটি এবং মুদ্রা সম্পদের মতো অ-পরিষেবাযোগ্য সম্পদে জমা রয়েছে। যেই ক্ষেত্রগুলি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের দ্বারা পরিচালিত হয় না বা সহজে পুনর্বণ্টন করা কঠিন।

আরও পড়ুন: আগামী পাঁচ বছরে আর জল পাবে না ভারতের এই শহরগুলি, নীতি আয়োগের ভয় ধরানো রিপোর্ট এল সামনে

ভারতের হাই নেটওয়ার্থ ইন্ডিভিজুয়াল (এইচএনআই) অর্থাৎ উচ্চ বিত্তশালীর সংখ্যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। সকলেরই বয়স ৩০ বছরের কম। অ্যানারক প্রপার্টি কনসালট্যান্ট নামক এক পরামর্শদাতা সংস্থার সমীক্ষা উঠে এসেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে উচ্চ বিত্তশালীদের সংখ্যাটি ২৫ শতাংশে পৌঁছবে। ওই সংস্থার গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে, ভারতীয় কোটিপতিদের প্রায় ২০ শতাংশের বয়স ৪০-এরও কম। প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে যে ২০২৪ সালে ভারতের বিত্তশালীর পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। চিনের ক্ষেত্রে সেই বৃদ্ধির হার মাত্র ২ শতাংশ।

রিপোর্ট অনুযায়ী, নতুন বিত্তশালীদের প্রায় ৩০ শতাংশ তাঁদের সম্পত্তি করেছেন প্রযুক্তি, স্টার্টআপ এবং ফিনটেকের মাধ্যমে। এর পিছনে কেন্দ্রীয় সরকারের মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের অবদান অনেকটা। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৪ শতাংশ অতি উচ্চ বিত্তশালীরা দুবাই, লন্ডন, সিঙ্গাপুরের মতো বিদেশী শহরে জমি বা বাড়ি কিনে রেখেছেন। দেশের ৩৭ শতাংশ বিত্তশালীরা ২০২৪ সালে ল্যাম্বরঘিনি, পোর্শা, রোলস রয়েসের মতো দামি গাড়ি কিনেছেন। অতি উচ্চ বিত্তশালীরা বছরে ছয় কোটি টাকা খরচ করেছেন শুধু আমোদপ্রমোদে।