আজকাল ওয়েবডেস্ক: অসম সরকারের বিরুদ্ধে বাংলার নাগরিকদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে হয়রানি এবং নাগরিকত্ব প্রমাণের প্রক্রিয়ায় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বাংলা-অসম সীমান্তে অবস্থান বিক্ষোভে বসতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী ২৭ জুলাই কোচবিহারের বক্সিরহাটের অসম গেট থেকে ২০০ মিটার দূরত্বে বাংলার মাটিতে এই অবস্থান কর্মসূচি হবে বলে জানিয়েছেন কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। এই কর্মসূচিকে সফল করতে ইতিমধ্যেই জেলার ব্লক সভাপতিদের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠক করেছেন তৃণমূল জেলা সভাপতি।
তিনি জানান, 'অসমের বিজেপি সরকার লাগাতার বাংলার সাধারণ মানুষদের হয়রানি করছে। কখনও চিঠি দিয়ে অনুপ্রবেশকারী বলা হচ্ছে, আবার কখনও কারুর ক্ষেত্রে নাগরিকত্বের তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে অকারণ বিলম্ব করা হচ্ছে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামব আমরা।' গত ২১ জুলাই কলকাতায় শহিদ সমাবেশে এই ইস্যুতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া ভাষায় অসমের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন। সেই সুরেই এবার সরাসরি সীমান্ত এলাকায় আন্দোলনে নামছে তৃণমূল।
তৃণমূলের শহিদ দিবসের দিন দিনহাটার বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসী, যাঁকে অসম সরকারের তরফে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ বলে চিহ্নিত করে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাঁকেও পাশে নিয়ে ২১-এর মঞ্চে সওয়াল করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে, নাগরিকত্ব না পাওয়া বক্সিরহাটের বাসিন্দা আরতি ঘোষের বাড়িতেও গিয়েছিলেন কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি।
অভিজিতের দাবি, 'বিজেপি পরিচালিত রাজ্যগুলিতে বাংলার শ্রমিকদের উপরও চরম অত্যাচার চালানো হচ্ছে। এই অবস্থায় চুপ করে বসে থাকা চলবে না। আমরা প্রতিবাদে মুখর হব।'
আরও পড়ুন: দার্জিলিংয়ে ঘুরতে গেলেই বিপদ! রাস্তায় কাটাতে হতে পারে পর্যটকদের, কী হচ্ছে পাহাড়ে?
কখনও স্থানীয় বাসিন্দা আবার কখনও পুলিশ, ভিন রাজ্যে কাজের সন্ধানে যাওয়া এরাজ্যের বাসিন্দাদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ বারবার উঠে এসেছে। বাংলাদেশি সন্দেহ করে আটক ও মারধরের সঙ্গে বিএসএফের মাধ্যমে বৈধ নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে 'পুশব্যাক' করার অভিযোগও উঠেছে। এমনকী এটাও দেখা গিয়েছে, যাকে বাংলাদেশি সন্দেহ করে পুশব্যাক করা হয়েছে তিনি আদতে একজন ভারতীয় নাগরিক। পরবর্তী সময়ে দু'দেশের তরফে কথাবার্তা বলে ফের তাঁকে আবার এদেশে ফেরত নিয়ে আসা হয়েছে। দিল্লিতে বাংলাদেশের নাগরিক সন্দেহ করে এক বিরাট সংখ্যক মানুষকে জল বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। লক্ষ্যনীয়, এঁরা সকলেই বাংলাভাষী। গত ২১ জুলাই শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে এই বিষয়টি নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। ওই মঞ্চ থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন রাজ্য জুড়ে 'ভাষা আন্দোলন শুরু করতে। স্বাভাবিকভাবেই জেলায় জেলায় তৃণমূল নেতা ও কর্মীরা এই বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
যারই ফলস্বরূপ কোচবিহারে তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁদের এই আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। পাশাপাশি আগামী ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে চলা এই অবস্থান বিক্ষোভ ঘিরে সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশাসনও সতর্ক নজরদারি চালাচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই আন্দোলন উত্তাপ বাড়াতে পারে কোচবিহার জেলাজুড়ে।
