এমনটাই ভাবেন ব্রাত্য বসু? সেই ভাবনাকে সমর্থন করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়? এই প্রথম দুজনে একসঙ্গে কাজ করলেন ‘বহমান’ ছবিতে। তার আগে খোলামেলা আড্ডায় অকপট সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও ব্রাত্য বসুর মুখোমুখি অলোকপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।
এই প্রথম একসঙ্গে এক ছবিতে কাজ করলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও ব্রাত্য বসু। অনুমিতা দাশগুপ্তর ‘বহমান’ ক্যামেরার সামনে নিয়ে এল দুই প্রজন্মের দুই কৃতবিদ্য অভিনেতাকে। কিন্তু এঁরা দুজনেই বাংলা নাটকের মঞ্চে দুই প্রজন্মের দুই স্বতন্ত্রধারার পথ প্রদর্শক। একদা হাতিবাগানের থিয়েটার ও আকাদেমি অঞ্চলের গ্রুপ থিয়েটারের বাইরে এক তৃতীয় ধারার সূচনা করে সেই থিয়েটারকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তার জন্যে বহু বিদেশি নাটকের নেহাৎ অনুবাদ নয়, অনুসৃষ্টি করেছেন তিনি। পরিচালনা করেছেন। অভিনয় করেছেন প্রধান ভূমিকায়। আর, ব্রাত্য বসু একটার পর একটা নাটক লিখে পুষ্ট করেছেন বহু নাট্যদলকে এবং নিজে তথাকথিত গ্রুপ থিয়েটারের পুরনো ফর্মুলাকে অগ্রাহ্য করে ‘কম্পানি থিয়েটার’-এর ভাবনাকে সামনে এনেছেন, যে থিয়েটার ভাল প্রযোজনার স্বার্থে যে কোনও অভিনেতা, অভিনেত্রীকে ডাকবে, প্রয়োগ করবে, গ্রুপ থিয়েটারের তথাকথিত নীতিবাগিশ ভাবনাকে অগ্রাহ্য করে। নাটককার পরিচালক ও প্রধান অভিনেতা হিসেবে ব্রাত্য বসু বাংলা থিয়েটারের অগ্রগন্য ব্যক্তিত্ব। দুই প্রজন্মের এই দুই মহীরুহ কখনও মঞ্চে একসঙ্গে এলেন না, এটা কি চিরকালীন আফসোস হয়ে থেকে যাবে? এই ভাবনা থেকেই, ‘বহমান’-এর দুই অভিনেতাকে একসঙ্গে পেয়ে থিয়েটারের প্রসঙ্গই চলে এল, প্রায় অবধারিতভাবে।
• সৌমিত্রদা, আপনি তো ব্রাত্য বসুর প্রজন্মের নাট্য পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করেছেন। এই প্রজন্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাটককার ব্রাত্য বসু। এবং ব্রাত্য নাট্য পরিচালক হিসেবেও অগ্রগন্য। আপনার কি কখনও ইচ্ছে হয়েছে, ব্রাত্যর পরিচালনায় থিয়েটারে অভিনয় করতে?
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: আগে থেকে তো কোনও ইচ্ছে আমি করি না। আমাদের থিয়েটারে কত কিছু তো স্বপ্নে ভাবা যায়। কিন্তু সেটা ভেবে তো লাভ নেই। ব্রাত্যর কোনও ভাবনা থাকলে, সেই নাটকটা পড়লে, ওর ভাবনাটা জানলে আমার ইচ্ছে হতে পারে। এমনি এমনি তো আর ইচ্ছে হয় না। তখন আমি ভাবতে আরম্ভ করব।
• আচ্ছা ব্রাত্য, আপনার কি কোনও ইচ্ছে আছে সৌমিত্রদাকে নিয়ে কাজ করার?
ব্রাত্য বসু: এখনও আমি মনে করি যে কোনও একটা থিয়েটার যদি সৌমিত্রদার সঙ্গে করতে পারি, সেটা আমার জীবনের একটা মাইল-ফলকই হয়ে উঠবে। ফলে, অবশ্যই আমার ইচ্ছে আছে সৌমিত্রদার সঙ্গে কাজ করার।
• আমরা, বাংলা নাটকের দর্শকরাও, সেই প্রস্তাব এবং ইচ্ছেপূরণের দিকে তাকিয়ে থাকব। সৌমিত্রদা, ব্রাত্যর রচনায় এবং পরিচালনায় যে সব থিয়েটার হয়েছে, তার মধ্যে আপনার কোনটা সবচেয়ে পছন্দের বা সবচেয়ে প্রিয়?
ব্রাত্য বসু: সৌমিত্রদা একটাই দেখেছেন। ‘ভাইরাস এম’।
• তার পরে আর দেখা হয়নি?
ব্রাত্য বসু: না,না।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: একটায় আমাকে ব্রাত্য করতে বলেছিল। সেটা সিনেমা, নাকি, থিয়েটার, আমি ভুলে গেছি।
ব্রাত্য বসু: সেটা সিনেমা। আমার সেই সিনেমাটায় সৌমিত্রদার করার কথা হয়েছিল। কিন্তু সিনেমাটাই হয়নি।
• নাটকে সৌমিত্রদার কোন কোন কাজ ব্রাত্যর সবচেয়ে প্রিয়?
ব্রাত্য বসু: আমি সৌমিত্রদার থিয়েটার নিয়ে একটা দীর্ঘ লেখা লিখেছি। সৌমিত্রদা বাংলা থিয়েটারের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ধারা, প্রায় একটা সমান্তরাল ধারা তৈরি করেছিলেন। পেশাদার মঞ্চ বলে যে বিষয়টি এখনও আমাদের এখানে বহমান, সেটার যদি কোনও শেষ ‘কলোশাস’ থাকেন, তার নাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আমি যখন সৌমিত্রদার থিয়েটার দেখা শুরু করেছি, তখন আমাদের এখানে পেশাদার থিয়েটারটা প্রায় উঠে যাবার মুখে। তখন ব্যক্তিগত যে অন্ত্রপনর, সৌমিত্রদা তাঁদের সঙ্গে কাজ করছেন এবং তখনও সৌমিত্রদার মধ্যে থিয়েটার করার উদগ্র ক্ষুধা। তখন গ্রুপ থিয়েটার ও পেশাদার থিয়েটারে ভাগাভাগি ও ভাঙাভাঙি চলছে। সৌমিত্রদা তখন একার হাতে যেন সেই বিভেদটা বা ভাঙাটাকে অতিক্রম করে যাচ্ছেন। আমি সেই সময় সৌমিত্রদার যে থিয়েটারগুলো দেখেছি, সেখানে আমার কাছে খুব উল্লেখযোগ্য থিয়েটার হচ্ছে ‘দর্পনে শরৎশশী’ এবং আর একটা থিয়েটার আমার কাছে ‘হন্টিং’ লেগেছিল, সেটা ‘প্রাণতপস্যা’, যেখানে একটা লোক অন্য একটা মৃত লোক, মানে, প্রায় মৃত লোকের সঙ্গে কথা বলে যায়। ওখানে একজন মানুষের এমন কিছু আঁতের কথা বেরিয়ে আসে, যেখানে শিল্পী-জীবন এবং ব্যক্তি-জীবন, কাল্পনিক চরিত্র এবং স্ব-চরিত্র কোথাও মিলেমিশে যাচ্ছে। তাঁর অভিমান, আর্তি সবই বেরিয়ে আসছে। এই ‘প্রাণতপস্যা’ এবং অবশ্যই ‘টিকটিকি’। সৌমিত্রদা পরিচালিত। সেখানে সৌমিত্রদা এবং কৌশিকের (কৌশিক সেন) যুগলবন্দী অভিনয় নিশ্চয়ই আমি মনে রাখব।
• সৌমিত্রদা, আপনি গ্রুপ থিয়েটার এবং পেশাদার থিয়েটারের বাইরে একটা তৃতীয় থিয়েটার শুরু করেন, যেটা সত্যিই একটা সমান্তরাল ধারা, যেটা ব্রাত্যও বললেন...
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: পেশাদার থিয়েটারের বাইরে কিছু করিনি। পেশাদার থিয়েটারই করতে চেয়েছি, চেষ্টা করেছি।
• আপনি কিন্তু হাতিবাগানের থিয়েটার করতে চাননি। আপনার থিয়েটারকে তৃতীয় ধারা বলা যায়। যেটা গ্রুপ থিয়েটার হয়েও তথাকথিত গ্রুপ থিয়েটার নয়।
ব্রাত্য বসু: আপনি গ্রুপ থিয়েটারের মধ্যে পেশাদার থিয়েটারের ধাঁচাটা বুদ্ধিদীপ্তভাবে ব্যবহার করেছেন।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: তখন তো হাতিবাগানের পেশাদার থিয়েটারে প্রায় ঘুন ধরে গেছে। ফলে আমি উল্টোদিক দিয়ে ভাল পেশাদার হবার চেষ্টা করেছি। ভাল পেশাদারি থিয়েটার করার চেষ্টা করেছি। এবং সেখানে, বলা বাহুল্য, গ্রুপ থিয়েটারের যে সজীবতা, তার সঙ্গে আমার মিলেছে বেশি। মিলটা বেশি সেখানেই হয়েছে। তার সঙ্গে সঙ্গে আমি এটাও দেখেছি, লক্ষ্যটা আমার গ্রুপ থিয়েটার থেকে একটু আলাদা হত। তার কারন, ভিস্যুয়ালের দিকে আমার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। তখন সেটার অভাব ছিল। আমার কাছে থিয়েটারের ভিস্যুয়ালও খুব জরুরি। থিয়েটারকে যেমন পুরোপুরি হাতিবাগানের ধাঁচায় আটকে রাখা ঠিক নয়, তেমনি ম্যাড়ম্যাড়ে করে ফেলার কোনও ইচ্ছে আমার কখনও হয়নি। থিয়েটারকে সদর্থে পেশাদার করার ইচ্ছে এবং উদ্যোগ আমার সবসময়েই ছিল। সেই চেষ্টাটা আমি করে গেছি।
• সৌমিত্রদা, থিয়েটার নিয়ে আপনার যা ভাবনা, আপনি যেটা বলছেন, তার উত্তরসূরী বলা যায় ব্রাত্যকে। ব্রাত্য একটা কনসেপ্ট বা ভাবনা এনেছেন, যেটা ব্রাত্যর ভাষায় ‘কম্পানি থিয়েটার’। এটা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। এখনও হয়। ব্রাত্য এই কম্পানি থিয়েটারে বলছেন, গ্রুপ থিয়েটার মানে এটা নয় যে আমাদের গ্রুপে যারা আছে, তাদের দিয়েই সবসময় অভিনয় করাতে হবে। বরং সেই নাটকে থিয়েটারের ভালর জন্যে যে অভিনেতা, অভিনেত্রীকে দরকার, তাকেই নিতে হবে।
ব্রাত্য বসু: যোগ্য চরিত্রে যোগ্য লোক কাজ করবে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: এটা তো থিয়েটারের প্রাথমিক কথা। এটার সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। সহমত সে বিষয়ে। থিয়েটার নানা রকম নিয়ে। অত বিভাজন করে লাভ নেই। এতে ক্ষতি। একটা থিয়েটার ভাল হতে পারে, খারাপ হতে পারে, মাঝামাঝি রকম হতে পারে, খানিকটা ভাল হয়েছে, খানিকটা হয়নি, এমনও হতে পারে। এসথেটিক বিচারগুলো আসতে পারে তখন।
• কিন্তু ব্রাত্যর এই কম্পানি থিয়েটার নিয়ে কিন্তু প্রচুর সমালোচনা হয়েছে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়:সেই সমালোচনার কোনও মানে আছে কি? লুকিয়ে লুকিয়ে ঘোমটা টানার?
ব্রাত্য বসু: ঘোমটা টানার কোনও মানেই হয় না। দেখুন সৌমিত্রদা, গ্রুপ থিয়েটার যেটাকে বলা হয়েছে, সেটা তো বেসিক্যালি একজন ব্যক্তির নামেই পরিচিতি পেয়েছে। যে, এটা শম্ভু মিত্রের দল।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: হ্যঁা, শম্ভু মিত্রের দল
ব্রাত্য বসু: যেমন, উৎপল দত্তর দল। এইভাবেই তো এসেছে।
• সৌমিত্রদা, ব্রাত্য আর একটা কথা বলেন যে, একজন যে ডিরেক্টর, তাকেই প্রোডিউসার হতে হবে দলের এবং তাকে ‘ডিক্টেটর’ হতে হবে।
•• প্রোডিউসার সব সময় হতে পারা যায় কি না, আমি জানি না...
ব্রাত্য বসু: প্রোডিউসার হতে হবে, তা আমি বলিনি। আমি বলেছি, ডিরেক্টরকেও প্রোডিউসার হতে হচ্ছে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: প্রোডিউসার বলতে সত্যিকারের অর্থে যা বোঝায়, যে জিনিসটা প্রযোজনা করে।
ব্রাত্য বসু: যে সমস্তটার দায়িত্ব নেয়।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: সমস্তর দায়িত্ব নেয়।
ব্রাত্য বসু: শুধু অর্থনৈতিক দায়িত্ব নয়, মানসিক দায়িত্বও নেয়।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: হ্যাঁ, তাকে নির্মাতা হতে হবে।
• তাকে ডিক্টেটর হতে হবে, এটা আপনি মানেন?
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: এটা এখানে কর্মপদ্ধতি। থিয়েটারে ডিক্টেটরশিপটা কর্মপদ্ধতি। কেউ ডিক্টেটরশিপ বাদ দিয়েও যদি করতে পারে, ভাল। কিন্তু, ডিরেক্টরকে যেহেতু দলের ডিসিপ্লিনটা দেখতে হয়, যা আমাদের দেশের হাড়ের মধ্যে নেই, (দুজনে হেসে ওঠেন), সেটা নেই বলে, অনেক সময় ডিক্টেটরশিপ না করে উপায় থাকে না।
ব্রাত্য বসু: আমি একটা কথা বলে নিই। ওই যে শুরুতে আপনার প্রশ্নের উত্তরে বললাম, ‘ভাইরাস এম’-এর পর সৌমিত্রদা আমার আর কোনও নাটক দেখেননি। কেন? তার কারন আমাদের দুজনের মাঝখানে অনেক জিনিস প্রবেশ করেছিল। সেই প্রসঙ্গে বলি, একবার অমিয় চক্রবর্তীকে বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন, বরিস পাস্তেরনাক বিষয়ে ডিবেটের সময়, যে, কে এই বরিস পাস্তেরনাক, যিনি আমার আর আপনার মাঝখানে এসে দাঁড়াতে পারেন? তাই আমি বলছি, থিয়েটার ব্যাপারটা এতটাই বড় এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ব্যাপারটাই এতটা বড়, যে, কে এই রাজনীতি যে আমার আর আপনার মাঝখানে এসে দাঁড়াতে পারে?
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: রাজনীতি যাই হোক না কেন, একজন ব্যক্তিকে আমি সেই মূল্যে নেব না থিয়েটার করার সময়, থিয়েটার নিয়ে ভাবার সময়।
• ‘বহমান’ ছবিতেই এই প্রথম আপনি আর ব্রাত্য একসঙ্গে অভিনয় করলেন। কেমন লাগল ব্রাত্যর অভিনয়?
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: ভাল শুধু নয়, খুব ভাল। (একটু থেমে) ওই যে আগে থিয়েটারে ডিক্টেটরশিপ নিয়ে যে প্রশ্ন করলে, আমি যে ডিসিপ্লিনের কথা বলছিলাম, তাতে আমার একটা কথা মনে এসে গেল। সেও প্রায় দশ-পনের বছর হয়ে গেছে, যখন সুভাষচন্দ্র বোসের আর্কাইভ খুলে দেওয়া হল দর্শকদের জন্যে। তার আগে তো দেখতে পাওয়া যেত না। সেখানেই প্রথম পাওয়া গেল, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের জন্য কী রি-কনস্ট্রাকশন সুভাষ বোস ভেবেছিলেন। উনি লিখেছিলেন, স্বাধীনতার পরে ২০ বছরের ডিক্টেটরশিপের কথা। এটা নিয়ে বামপন্থীদের খুব রাগ। এটা কী বলেছিলেন উনি? কিন্তু উনি নানান উদাহরণ ও যুক্তি দিয়ে বলেছেন, প্রথম দশ বছর আমি চাই টোটাল ডিক্টেটরশিপ। তারপরের দশ বছর আস্তে আস্তে ফেডআউট করতে করতে, কুড়ি বছরের মাথায় গণতন্ত্র। কী অসাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে উনি একথা বলেছিলেন, ভাবতেই বিস্মিত হতে হয়। কেন উনি এটা চেয়েছেন, তাও উনি বলে দিচ্ছেন। উনি বলছেন, যে দুটো আমাদের দেশের পেরেনিয়াল প্রবলেম, তার একটা হচ্ছে ডিসিপ্লিনের অভাব, আর একটা কী, এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
ব্রাত্য বসু: বৃত্তি-নিষ্ঠ না থাকা?
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: ঠিক মনে পড়ছে না। সেটাও সাঙ্ঘাতিক কথা। উনি বলছেন, এই দুটো জিনিস ডিক্টেটরশিপ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও আনা যায়নি।
ব্রাত্য বসু: থিয়েটারে ওটা দরকার, এটাই সৌমিত্রদা বলছেন।
• তাহলে, ব্রাত্যর কম্পানি থিয়েটারে তো স্ট্যাম্প দিয়ে দিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়?
ব্রাত্য বসু: সেটাই তো হল।
• সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘বহমান’-এ অভিনয় করে ব্রাত্যর অভিজ্ঞতা কী? এই তো প্রথম একসঙ্গে কাজ করা?
ব্রাত্য বসু: হ্যাঁ, আমি এমন একজন লেজেন্ডের সঙ্গে কাজ করলাম জীবনে প্রথম। কিন্তু যেটা সবচেয়ে বেশি ইন্টারেস্টিং, শুটিং চলাকালীন থিয়েটারের এমন এমন অ্যানেকডোট, শিশির ভাদুড়ি থেকে শুরু করে শম্ভু মিত্র, কত ঘটনা, কত গল্প শুনেছি সৌমিত্রদার কাছে। সব সময় যে সেগুলো মধুর গল্প হচ্ছে, তা নয় কিন্তু। সৌমিত্রদা প্রায় অকপটে বলে যাচ্ছেন। খোলা মনে। সত্যজিৎ রায়কে নিয়েও দারুন দারুন সব গল্প বলেছেন। এগুলো সব অসাধারণ। অভিনয়েও অনেক ছোট ছোট ব্যাপার উনি বলেছেন। ঠিক বলার জন্যে বলেছেন, তা নয় কিন্তু। আমি খোঁচাচ্ছি। এমন একটা মানুষের সঙ্গে কাজ করছি, আমি তো চাইবই আমার ভাঁড়ারটা ভর্তি করতে। এবং সৌমিত্রদা কখনও ক্লান্ত হতেন না। ঠিকঠাক লোক পেলে সৌমিত্রদা একজন অনর্গল আড্ডাবাজ। এবং অক্লান্ত। এবং প্রাণবন্ত। এবং এখনও স্বপ্ন দেখেন অভিনয় নিয়ে। থিয়েটার নিয়ে। এইসব স্বপ্নের কাছে কটা দিন থেকেছি শুটিংয়ের সময়, এটা একটা বড় প্রাপ্তি।
সেই প্রাপ্তি আমাদের আরও পূর্ণ হবে, যদি, সত্যিই সৌমিত্র-ব্রাত্য যুগলবন্দী, ‘বহমান’-এর পরে এসে পড়ে বাংলা থিয়েটারেও।
আমরাও স্বপ্ন দেখছি।
সাক্ষাৎকারের সময় সৌমিত্র চট্ট্যোপাধ্যায় ও ব্রাত্য বসু। ছবি: সুপ্রিয় নাগ