গান্ধীজির সার্ধশতবর্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের বহুল প্রচারিত উদ্যাপন অনেক কথা মনে করিয়ে দিতে বাধ্য। গান্ধীকে নিয়ে অভিযোগ, বাংলার গর্ব নেতাজি সম্পর্কে তিনি কিছু ক্ষেত্রে কড়া মনোভাবই দেখিয়েছেন। ঘটনা, কংগ্রেস সভাপতি পদে সুভাষচন্দ্র নির্বাচিত হওয়ার পর গান্ধী যেভাবে সরে যেতে বাধ্য করেছিলেন, তা কে ভুলবে? কিন্তু, ইতিহাস বলছে, গান্ধী–সুভাষচন্দ্র সম্পর্ক অনেক সময়েও ভাল থেকেছে। সুভাষকে গান্ধী স্নেহ করতেন। পথ ভিন্ন হয়েছিল। ধর্মনিরপেক্ষতার অতন্দ্র প্রহরী দুজনই। সুভাষের ‘বামপন্থা’ গান্ধী হজম করেননি। সমাজতন্ত্র নিয়ে সুভাষের মতও প্রবীণ নেতার কাছে গ্রাহ্য ছিল না। পরে তো প্রকাশ্যেই দেখা গেল ভিন্ন পথ। তবু, আজাদ হিন্দ ফৌজে ছিল ‘গান্ধী ব্রিগেড’। কমিউনিস্টরা গান্ধীর ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রকে মর্যাদা দিয়েছেন। সামাজিক বৈষম্যের দিকটা গুরুত্ব পায়নি গান্ধীর ভাবনায়, বামপন্থীরা মানতে পারেননি। কিন্তু তাঁরা গান্ধী বিরোধিতাতেও মুখর ছিলেন না। বিশিষ্ট বাগ্মী, বাম নেতা হীরেন্দ্রনাথ মুখার্জির ‘গান্ধীজি— এ স্টাডি’ বইটিতে সশ্রদ্ধ মূল্যায়ন নথিবদ্ধ হয়ে আছে। কিন্তু, আজ যাঁরা গান্ধীজিকে ‘নিজেদের’ বলে প্রচার করছেন, তাঁদের কী ভূমিকা ছিল? স্বাধীনতা আন্দোলনে কী ভূমিকা ছিল আরএসএস–এর? ঘাতক নাথুরাম গডসে আরএসএস–এর চিন্তায় ‘উদ্বুদ্ধ’ ছিলেন। এখনও অনেক আরএসএস–বিজেপি নেতা–নেত্রী, যথা সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর, নাথুরাম গডসের ভক্ত। পুজোও করেন। গোটা স্বাধীনতা আন্দোলনে শুধু দূরে ছিল না আরএসএস, কার্যত ব্রিটিশ–ভজনা করেছে। ওদের আরাধ্য সাভারকার মুচলেকা দিয়েছেন। লিখেছেন ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের বিরুদ্ধে, যে–আদর্শের জন্য আজীবন লড়েছেন গান্ধীজি। আজ ওদের গান্ধী–ভজনার বহর দেখে স্তম্ভিত হতেই হবে।