সংবাদ সংস্থা: অর্থনীতির বৃদ্ধি থমকে গেছে। এর ওপর কেন্দ্র সরকার আর্থিক ঘাটতি পূর্বনির্দিষ্ট হারে বেঁধে রাখতে পারবে কি না, প্রশ্ন উঠে গেল তা নিয়ে। খোদ প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বিবেক দেবরায় শনিবার বললেন, আর্থিক ঘাটতি যে ৩.৩ শতাংশে বেঁধে রাখতে পারবে না কেন্দ্রীয় সরকার, এ নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে আরও বেশি আশঙ্কার কথা শোনালেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। তাঁর বক্তব্য, শুধু আর্থিক ঘাটতির অঙ্কেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে মাপা সম্ভব নয়। বাস্তব অবস্থা শোচনীয়। কয়েকদিন আগেই আর্থিক ঘাটতি নিয়ে মাথা না ঘামাতে কেন্দ্রকে পরামর্শ দিয়েছিলেন শিল্পপতি আদি গোদরেজ। আমেরিকার ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে ও পি জিন্দাল ভাষণ দেওয়ার সময় রাজন বলেন, এখন ভারতীয় অর্থনীতির নানা স্তরে অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে, পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে শোচনীয়। ২০১৬ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকেও বিকাশের হার ছিল ৯%। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ শতাংশে। পরের ত্রৈমাসিকে হয়েছে ৫.৩ শতাংশ। আগস্ট মাসে শিল্পোৎপাদনও কমেছে গত সাত বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডি’জ সম্প্রতি জানিয়েছে, ২০১৯–২০ আর্থিক বছরে ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদন বাড়বে ৫.৮% হারে। এর আগে তারা জানিয়েছিল, বৃদ্ধির হার হবে ৬.২%। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও জানিয়েছিল, চলতি বছরে অর্থনীতি বৃদ্ধি পাবে ৬.৮% হারে। এখন তারা জানিয়েছে এই বৃদ্ধি ৬.১ শতাংশের বেশি হওয়া সম্ভব নয়। রাজনের মতে, ভারতের অর্থনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই কিছু দুর্বলতা আছে। কিন্তু সেই দুর্বলতা কাটানোর চেষ্টা হয়নি। এরই পাশাপাশি বিবেক দেবরায় জানিয়েছেন, চলতি আর্থিক বছরে বৃদ্ধির হার ‘৬ শতাংশের আশপাশে’ থাকবে। তা হলে নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার যে দাবি করেছেন চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার থাকবে ৭.৫ শতাংশের ওপরে? দেবরায়ের উত্তর, বরং রাজীব কুমারকেই সেই প্রশ্ন করা ভাল। তাঁর বক্তব্য, আর্থিক ঘাটতি হবেই। তবে ঘাটতি কতটা হবে সে নিয়ে মুখ খোলেননি তিনি।
অর্থনৈতিক মন্দার জন্য এদিন বিবেক দেবরায় সরাসরি দায়ী করেছেন জিএসটিকে। তাঁর মতে যে ভাবে তাড়াহুড়ো করে জিএসটি চালু করা হয়েছিল, সেটাই সঙ্কটের অন্যতম প্রধান কারণ। তাঁর মতে, জিএসটির বর্তমান হার তুলে দিয়ে ৬, ১২, ১৮% হারে জিএসটি চালু করা যেতে পারে। গত ১৯ মাসের মধ্যে এই সেপ্টেম্বরে জিএসটি বাবদ সংগ্রহ হয়েছে সবচেয়ে কম। তবু দেবরায়ের মতে, বদল আনতে হলে এটাই সেরা সময়।
দেবরায় এদিন ইঙ্গিত দেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে খুব সম্ভব আয়করেও ভালরকম ছাড় দেবে কেন্দ্র। তবে আগামী বাজেটেই এই ছাড় দেওয়া হবে কি না, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। দেবরায় বলেন, সম্প্রতি যে কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো হয়েছে, তাতে বিনিয়োগ বাড়বে না। মানুষের চাহিদা বাড়াতে হলে সরকারকে অন্য পদক্ষেপ ঘোষণা করতে হবে। তাঁর আশা, আগামী বাজেটের আগে বেশ কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করা হবে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে কী সেই পদক্ষেপ তা নিয়ে মুখ খোলেননি তিনি।