আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বধীন বাংলাদেশ সরকার শীঘ্রই একটি সরকারি ভবনে দীর্ঘদিন ধরে সিল করে রাখা একটি ভল্ট খুলতে চলেছে। এই ভল্টেই বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং মূল্যবান হীরাগুলির মধ্যে একটি দরিয়া-ই-নূর রাখা রয়েছে বলে মনে করা হয়। এটিকে কখনও কখনও ‘কোহিনূরের বোন’ বলা হয়। ২৬ ক্যারেটের এই হীরাটি ভারতের গোলকোন্ডা খনিতে আবিষ্কৃত হয়েছিল। যা ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত একটি হীরার খনি। জনসাধারণের চোখ থেকে অদৃশ্য হওয়ার আগে এই হীরাটি মুঘল, মারাঠা এবং শিখ শাসকদের হাত ঘুরেছে।
দরিয়া-ই-নূর হীরা কী?
বছরের পর বছর ধরে এই অমূল্য হীরার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এখন মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের সর্বশেষ পদক্ষেপের মাধ্যমে আবার আশার আলো দেখাচ্ছে। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, দরিয়া-ই-নূর হল ২৬ ক্যারেটের কাটা হীরা যার একটি আয়তাকার টেবিল কাট রয়েছে। কোহিনূরের মতো, এটিও দক্ষিণ ভারতের গোলকুন্ডা খনি থেকে এসেছে বলে অনুমান করা হয়।
আরও পড়ুন: ‘নিষিদ্ধ প্রেম’-এ মেতে উঠেছিল ভাই এবং বোন, সন্তান জন্মের ১৪ মাস পরেই সম্পর্ক পেল হৃদয়বিদারক পরিণতি
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই হীরা কোন কোন শাসকদের হাতবদল হয়েছে?
ব্রিটিশ জুয়েলারি সংস্থা হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানির নথিপত্র থেকে জানা যায় যে, ভারতের মারাঠা শাসকদের কাছে এই হীরাটি দীর্ঘদিন ধরে ছিল। পরবর্তীতে, হায়দ্রাবাদের মন্ত্রী নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাহ মুলকের পরিবার এই হীরাটি অধিগ্রহণ করে। কোহিনূর এবং দরিয়া-ই-নূর অবশেষে পাঞ্জাবের মহারাজা রঞ্জিত সিং-এর দখলে চলে যায়, যিনি এগুলি তাঁর বাহুতে বাহুবন্ধনীর মতো পরতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে রঞ্জিত সিংয়ের মৃত্যুর পর, এই হীরাগুলি ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে আসে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের মতে, দরিয়া-ই-নূর লাহোর থেকে রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে পাঠানো হয়েছিল। মহারাজা রঞ্জিত সিংয়ের পুত্র, দলীপ সিংয়ের কাছ থেকে হীরাটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। রানী ভিক্টোরিয়া দরিয়া-ই-নূরের রূপে মুগ্ধ হননি। পরে, ১৮৮৭ সালে, ভাইসরয় লর্ড ডাফরিন এবং লেডি ডাফরিন কলকাতার বালিগঞ্জে নবাবের বাড়িতে হীরাটি দেখেছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

১৮৬২ সালে ঢাকার প্রথম নবাব খাজা আলিমুল্লাহ এক নিলামে এই হীরাটি কিনে নেন। ১৯০৮ সালে, আর্থিক সঙ্কটের সময়, আলিমুল্লাহর বংশধর নবাব সলিমুল্লাহ ব্রিটিশ কর্তাদের কাছ থেকে টাকা ধার নেন। ঋণ নেওয়ার সময় নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকায় জমির টুকরো (সম্পত্তি) সহ হীরা এবং অন্যান্য সম্পদ বন্ধক রাখেন। অবশেষে হীরাটি ইম্পেরিয়াল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তানে এবং অবশেষে বাংলাদেশ সরকারের সোনালি ব্যাঙ্কে স্থানান্তরিত হয়। এটিই হীরাটির সর্বশেষ পরিচিত রেকর্ড।
আজ দরিয়া-ই-নূরের আনুমানিক মূল্য কত?
বর্তমানে দরিয়া-ই-নূর হীরার মূল্য আনুমানিক ১৩ মিলিয়ন ডলার (১১৪.৫ কোটি টাকা)। সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯০৮ সালের আদালতের নথিপত্রের ভিত্তিতে, হীরাটি ১০৮টি জিনিসপত্রের ভাণ্ডারের অংশ ছিল। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড জানিয়েছে যে ধনসম্পদ ধারণকারী সেফটি শেষবার ১৯৮৫ সালে খোলা হয়েছিল, কিন্তু ২০১৭ সালে রিপোর্ট আসে যে হীরাটি হারিয়ে গিয়েছে।
সোনালি ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলি খান এএফপিকে বলেন, “ভল্টটি সিল করা আছে। অনেক বছর আগে, একটি পরিদর্শন দল রত্নগুলি পরীক্ষা করতে এসেছিল, কিন্তু তারা কখনই এটি খোলেনি। তারা কেবল ভল্টের মূল গেটটি খুলেছিল।”
