বিশ্বের এই দেশকে বলে ‘সাত পাহাড়ের শহর’, কারণ জানলে আকাশ থেকে পড়বেন

img

ইতালির রাজধানী রোমকে বলা হয় “সাত পাহাড়ের শহর”। এই ঐতিহাসিক উপাধিটি এসেছে সেই সাতটি ছোট পাহাড় থেকে, যেগুলির উপর প্রাচীন রোম নগরীর ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। পাহাড়গুলির নাম হল — অ্যাভেনটাইন, কাইলিয়ান, ক্যাপিটোলাইন, এসকুইলাইন, প্যালাটাইন, কুইরিনাল এবং ভিমিনাল। এই পাহাড়গুলিতেই রোমান সভ্যতার জন্ম, এবং এখান থেকেই শুরু হয়েছিল বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্যের যাত্রা। প্রতিটি পাহাড়েরই নিজস্ব কাহিনি, কিংবদন্তি, মন্দির ও প্রাসাদ রয়েছে যা আজও রোমের ঐতিহ্য বহন করে।

img

নামের ইতিহাস ও রোমের উৎপত্তি: রোমের সূচনা সংক্রান্ত কিংবদন্তি শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৭৫৩ সালে, যখন যমজ ভাই রোমুলাস ও রেমাস, যাদের লালন-পালন করেছিল এক মা নেকড়ে, একটি নতুন শহর গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রোমুলাস প্যালাটাইন পাহাড়কে উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেছে নেন এবং সেখানেই রোম নগরীর ভিত্তি স্থাপন করেন। প্রথমদিকে এই সাতটি পাহাড় ছিল আলাদা আলাদা গ্রাম, যেগুলির চারপাশে ছিল বনভূমি ও নদী। ধীরে ধীরে জনসংখ্যা ও ব্যবসার প্রসারে এই গ্রামগুলো একত্রিত হয়ে একটি শক্তিশালী শহরে পরিণত হয়, যা পরে গড়ে তোলে রোমান সাম্রাজ্য — বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সভ্যতা।

img

প্যালাটাইন পাহাড়: রোমের সবচেয়ে প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ পাহাড় এটি। এখানেই রোমুলাস শহরের প্রথম বসতি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে এখানেই নির্মিত হয় সম্রাটদের রাজপ্রাসাদ ও বিশাল মন্দিরসমূহ। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এখানে নবম শতাব্দী খ্রিস্টপূর্বাব্দের ঘরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন, যা প্রমাণ করে রোমের সূচনা এখান থেকেই।

img

ক্যাপিটোলাইন পাহাড়: এটি ছিল প্রাচীন রোমের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কেন্দ্র। এখানেই নির্মিত হয়েছিল দেবতা জুপিটারকে উৎসর্গ করা বিশাল মন্দির । বর্তমানে এখানে মাইকেলএঞ্জেলোর নকশায় নির্মিত রেনেসাঁ যুগের সৌধ ও বিখ্যাত ক্যাপিটোলাইন মিউজিয়াম অবস্থিত।

img

অ্যাভেনটাইন পাহাড়: এই পাহাড় ছিল রোমের সাধারণ মানুষের আবাসস্থল। আজ এটি তার শান্ত পরিবেশ, কমলা ফুলের বাগান এবং প্রাচীন গির্জা যেমন “সান্তা সাবিনা”-র জন্য বিখ্যাত। এখানকার বিখ্যাত “কি-হোল” ভিউ থেকে দর্শনার্থীরা সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে পান।

img

কাইলিয়ান পাহাড়: এটি ছিল অভিজাত ও অভিজাত পরিবারের বাসস্থান। এখানে ছিল বিলাসবহুল ভিলা, স্নানাগার এবং প্রাচীন গির্জা। আজও “Basilica of Saints John and Paul”-এর মতো স্থাপত্য এই এলাকার গৌরব বহন করছে।

img

এসকুইলাইন পাহাড়: সাতটির মধ্যে সবচেয়ে বড় পাহাড় এটি। রোমান সাম্রাজ্যের সময় এটি ছিল জীবন্ত ও ব্যস্ত এলাকা, যেখানে ছিল বাজার, থিয়েটার ও বাগান। এখানেই সম্রাট নেরোর সুবিখ্যাত “Domus Aurea” বা “Golden House”-এর ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।

img

কুইরিনাল পাহাড়: এটি সাত পাহাড়ের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং আধুনিক রোমের প্রশাসনিক কেন্দ্র। এখানেই অবস্থিত “Quirinal Palace”, যা বর্তমানে ইতালির রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন।

img

ভিমিনাল পাহাড়: সবচেয়ে ছোট পাহাড় হলেও এটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অবস্থিত “Baths of Diocletian” — প্রাচীন রোমের বৃহত্তম জনস্নানাগার। পাশাপাশি “Teatro dell’Opera di Roma” রোমের শিল্প ও ইতিহাসের সংমিশ্রণ প্রদর্শন করে।

img

এই সাত পাহাড়ের সংযুক্তিই রোমান সভ্যতার সূচনা ঘটায়। পাহাড়গুলিতে ছিল দেব-দেবীর মন্দির, যা রোমানদের ধর্মীয় জীবন ও দৈনন্দিন বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটায়। “Palatine” শব্দ থেকেই “Palace” শব্দটির উৎপত্তি। আজও “Seven Hills of Rome” বাক্যটি রোমের চিরন্তন সৌন্দর্য ও শক্তির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রতি বছর ১০ মিলিয়নেরও বেশি পর্যটক এই পাহাড় ও তাদের আশেপাশের স্থাপত্য দেখতে আসেন। আধুনিক রোমে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আধুনিক জীবনের এই অসাধারণ মেলবন্ধন রোমকে সত্যিই করে তুলেছে “চিরন্তন নগরী”।