Khajuraho Travel: through the lenses of Akash Debnath Khajuraho Travel: through the lenses of Akash Debnath

মুখ মিলন বা সঙ্গমের বিশেষ পদ্ধতি-'ট্যাবু' নয় কিছুই, খোদাই করা আছে হাজার বছরের প্রাচীন ভারতীয় মন্দিরেই! খাজুরাহো দেখুন আজকাল ডট ইন-এর চোখে

img

আকাশ দেবনাথ: শুচিতার সঙ্গে যৌনতার যে বৈরী সম্পর্ক তার উৎপত্তি কি আদৌ ধর্মে? না মানুষের মনে? যে মিলন শৃঙ্গারের প্রকাশ, জীবের মাতৃত্ব বা পিতৃত্বের পথ তাকে কি ধর্ম পরিত্যাগ করতে পারে? হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন খাজুরাহো স্বচক্ষে দেখলে এই সব প্রশ্ন ফিরে ফিরে আসে।( ছবি- আকাশ দেবনাথ)

img

ধর্মের বিতর্ক নয়, বরং ছুঁৎমার্গ হীন সমাজের ঐতিহাসিক প্রমাণ খাজুরাহো মন্দির। একটি নয়, মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ছত্তরপুর জেলায় অবস্থিত খাজুরাহো আসলে একাধিক মন্দির সমূহের সমষ্টি। এই মন্দিরগুলি তাদের নাগার-শৈলীর স্থাপত্য এবং কামোদ্দীপক ভাস্কর্যের জন্য বিখ্যাত। ১৯৮৬ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে খাজুরাহো। ( ছবি- আকাশ দেবনাথ)

img

চান্দেলা রাজবংশের শাসন কালে ৯৫০ থেকে ১০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল এই মন্দিরগুলি। ঐতিহাসিকদের মতে, দ্বাদশ শতাব্দীতে খাজুরাহোতে মন্দিরের সংখ্যা ছিল ৮৫টি, যা ২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। বর্তমানে, প্রায় ২৫টি মন্দির টিকে আছে, যা ছড়িয়ে রয়েছে ৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। ( ছবি- আকাশ দেবনাথ)

img

১৮৩০-এর দশকে ব্রিটিশ সমীক্ষক টি. এস. বার্ট এই মন্দিরগুলি পুনরাবিষ্কার করেন। বেলেপাথর দিয়ে তৈরি মন্দিরগুলি উঁচু মঞ্চের উপর স্থাপিত। মন্দিরের দেওয়ালগুলিতে দেব-দেবী, অপ্সরা, কামোদ্দীপক যুগল, রাজকীয় শিকার, দরবার, শোভাযাত্রা ইত্যাদি খোদাই করা আছে। সেই কাজ এমন সূক্ষ্ম এবং নিপুণ যে স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। ( ছবি- আকাশ দেবনাথ)

img

যে যৌনতা নিয়ে আজও জনসমক্ষে কথা বলতে সঙ্কোচ বোধ করেন বহু মানুষ, সেই সব দৃশ্য খোদাই করা রয়েছে মন্দিরগুলির দেওয়ালে। যেমন এই ছবিটিতেই দেখা যাচ্ছে মুখ-মিলনের দৃশ্য। ( ছবি- আকাশ দেবনাথ)

img

খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে দেওয়ালে দেখা যাবে বহুগামিতার দৃশ্যও। ( ছবি- আকাশ দেবনাথ)

img

মিলনের বিভিন্ন ভঙ্গির দৃশ্যও খোদাই করা রয়েছে মন্দিরে। ( ছবি- আকাশ দেবনাথ)

img

এই ছবিটিতে যে ভাস্কর্য দেখা যাচ্ছে সেখানে সঙ্গমের তিনটি ধাপ বর্ণিত হয়েছে। নিচে রয়েছে প্রাথমিক চুম্বনের দৃশ্য, মাঝে রয়েছে আলিঙ্গন এবং সবচেয়ে উপর রয়েছে শারীরিক মিলনের দৃশ্য। ( ছবি- আকাশ দেবনাথ)

img

নিবিড় ভাবে খোদাই করা হয়েছে অপ্সরাদের মিলনের মুহূর্তও। ( ছবি- আকাশ দেবনাথ)

img

দার্শনিক ব্যাখ্যায় একথা ভাবাই যেতে পারে হঠাৎ মন্দিরে এহেন দৃশ্য কেন? ব্যক্তিগত ভাবে এর ব্যাখ্যা বহুবিধ, কেউ মনে করেন কামকে জয় করে তবেই ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনোর বার্তা দেয় এই মন্দির, কারও মতে প্রেমের পবিত্রতা পূজার সমতুল এ কথাই প্রকাশ পায় ভাস্কর্যগুলিতে। এই প্রসঙ্গে যে কোনও বাঙালির রবি ঠাকুরের প্রেম ও পূজা পর্যায়ের গানগুলির দর্শন মনে পড়ে যেতে পারে। ( ছবি- আকাশ দেবনাথ)

img

বিভিন্ন মন্দিরে পূজিত হতেন বিভিন্ন দেবতা। যেমন উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিষ্ণুর মূর্তি। ( ছবি- আকাশ দেবনাথ)

img

রয়েছেন বিশ্বনাথও। এই ছবিতে মন্দিরটির যে মেঝে বা চাতাল দেখা যাচ্ছে সেটিও অদ্ভুত শিল্পশৈলীর নিদর্শন। এই মেঝে এমন ভাবে ঢালু করা হয়েছে যে বাইরে থেকে আলো এসে মেঝেতে পড়লে সেই আলোর প্রতিফলন হবে শিবলিঙ্গের উপর। ( ছবি- আকাশ দেবনাথ)

img

দেওয়ালে পাশাপাশি রয়েছেন লক্ষ্মী-গনেশ। এমন প্রাচীন লক্ষ্মী-গনেশের মূর্তি গোটা ভারতে বিরল। ( ছবি- আকাশ দেবনাথ)

img

বর্তমানে খাজুরাহোর মন্দিরগুলির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া। মন্দিরপ্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পেরতে হয় কড়া নিরাপত্তা। তবে সব পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলে ভারতীয় সংস্কৃতির এমন একটি পাতা দেখতে পাওয়া যায় যা আক্ষরিক অর্থেই মৌলিক এবং অতুলনীয়। ( ছবি- আকাশ দেবনাথ)