‘আমরা তোমার জন্য ফিরে আসব’, মেজরের আশ্বাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও ২৯ বছর ‘যুদ্ধ’ করেন হিরু ওনোডা
অভিজিৎ দাস
শুক্রবার, 24 অক্টোবর 2025
1
12
নাৎসি জার্মান সশস্ত্র বাহিনী ৭ মে ১৯৪৫-এ মিত্রশক্তির কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। পরের দিন অর্থাৎ ৮ মে আত্মসমর্পণ কার্যকর হয়। ওই দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপের বেশিরভাগ অংশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়।
2
12
সময়ের পার্থক্যের কারণে, সোভিয়েত বাহিনী ৯ মে ১৯৪৫-এ তাদের ‘বিজয় দিবস’ ঘোষণা করে। কিন্তু এমন একজন যোদ্ধার গল্প আজ আমরা তুলে ধরব, যিনি বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও ২৯ বছর ধরে যুদ্ধে চালিয়ে যান।
3
12
কথা হচ্ছে জাপানের সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট হিরু ওনোডাকে নিয়ে। সাত সন্তানের পরিবারে জন্ম তাঁর। ২০ বছর বয়সে জাপানের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর গেরিলা যুদ্ধকৌশল, ইতিহাস, মার্শাল আর্টস এবং গোপন অভিযান সংক্রান্ত বিষয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
4
12
১৯৪৪ সালে তাঁকে লুবাংয়ে পাঠানো হয়। সেখানে তাঁকে একটি বন্দর এবং বিমানঘাঁটি নষ্ট করে আমেরিকার আক্রমণ রোখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার সেনা লুবাংয়ে পৌঁছয় এবং সেটির দখল নিয়ে নেয়। সেখানে উপস্থিত সকল জাপানি সেনাকে হয় হত্যা করা হয়েছিল, নয়তো তাঁদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।
5
12
এই পরিস্থিতিতে ওনোডার ঊর্ধ্বতন কর্তা মেজর ইয়োশিমা তানুগুচি ওনোডাকে শেষ নির্দেশ দিয়ে বলেন, “তুমি লড়াই চালিয়ে যাও, তিন বছর আবার পাঁচ বছরও লাগতে পারে। কিন্তু আমরা তোমার জন্য ফিরে আসবই।”
6
12
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বিমান থেকে লুবাংয়ে লিফলেট ফেলে জাপানের আত্মসমর্পণের কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু ওনোডা এবং তাঁর সঙ্গে থেকে যাওয়া তিন সেনা ভেবে নেন যে, মিথ্যে কথা ছড়ানো হচ্ছে। জঙ্গলের মধ্যেই তাঁরা লুকিয়ে থাকেন।
7
12
কলার খোসা, নারিকেল এবং চুরি করা চালের উপর নির্ভর করেই দিন কাটছিল তাঁদের। চার জন ধরেই নিয়েছিলেন যে, শত্রুপক্ষ তাঁদের না খাইয়ে মারতে চাইছে।
8
12
জঙ্গলে অসহায় সেনাজওয়ানদের খোঁজে সার্চ অপারেশনও চালানো হয়। কিন্তু ওনোডা নিজের ধারণায় অনড় ছিলেন যে, জাপানি সেনা তাঁর জন্য ফিরে আসবে। ১৯৫০-৫৩ সালে জঙ্গলের উপর দিয়ে বিমান উড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে তাঁরা ভেবেছিলেন যে জাপান পাল্টা আক্রমণ করেছে।
9
12
চার সেনার কোনও খোঁজ না পেয়ে জাপান সরকার ১৯৫৪ সালে সকলকে মৃত বলে ঘোষণা করে। তারপর থেকে আর সব চুপ। ১৯৭৪ সালে পর্যটক নরিয়ো সুজুকি ওনোডাকে খুঁজে পান। অনেক বোঝানোর পর ওনোডা অস্ত্র নামিয়ে রাখতে রাজি হন। কিন্তু একটি শর্তও রাখেন তিনি।
10
12
কী ছিল সেই শর্ত? ওনোডার দাবি ছিল মেজর তানুগুচিকে এসেই তাঁকে দায়িত্ব মুক্তি দিতে হবে। সেই শর্তের বিষয়ে জাপান সরকারকে জানানো হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এর পর তানুগুচির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
11
12
তানুগুচি যুদ্ধ শেষে অবসরের পর বই বিক্রি করতে শুরু করেছিলেন। তিনি লুবাংয়ে গিয়ে নিজের কথা রাখেন এবং ওনোডাকে দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেন। ১৯৭৪ সালে ৯ মার্চ হিরু ওনোডার জন্য যুদ্ধ শেষ হয়।
12
12
জাপানে ফেরার পর তাঁকে নায়কের সম্মান দেওয়া হয়। কারণ, তিনি ছিলেন শেষ সৈন্য যে যুদ্ধ শেষে ঘরে ফিরেছেন। চিকিৎসা তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে হতবাক হয়ে যান। কোনও রোগ ধরা পড়েনি তাঁর। এমনকি তাঁকে সেনা পেনশনও দেওয়া হয় মৃত্যুর দিন পর্যন্ত। অবশেষে ৯১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হিরু ওনোডা।