একদিনে সোনার দামে পতনের জের, অশনি সঙ্কেত দেখছেন বিশেষজ্ঞরা

img

২১ অক্টোবর সোনার বাজারে দেখা গেল এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় একদিনের পতন। দীর্ঘ এক বছরের ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতির পর হঠাৎই এই ধাক্কা বাজারে তৈরি করেছে নতুন অনিশ্চয়তা।

img

গত এক বছরে সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৫৭ শতাংশ, আর এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমদানিতে পারস্পরিক শুল্ক আরোপের পর থেকে দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। কিন্তু মঙ্গলবার সোনার স্পট প্রাইস ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়ে বিনিয়োগকারীদের মনে তৈরি করেছে প্রশ্ন—সোনার এই র্যাগলি কি শেষের পথে?

img

বর্তমানে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৪,১০০ ডলারের উপরে থাকলেও, ২১ অক্টোবরের পতনে তা নেমে গিয়েছিল ৪,০৫৪ ডলার পর্যন্ত। এই ধাক্কা বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করেছে এবং ভবিষ্যতের দামের গতিপথ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

img

বাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, এটি শুধুমাত্র “সংশোধন পর্যায়”, যা দীর্ঘমেয়াদি ঊর্ধ্বগতির পর স্বাভাবিক। আবার অন্য একটি অংশ সতর্ক করছেন সম্ভাব্য বড় পতনের বিষয়ে।

img

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ এখন বিপুল হারে সোনা ETF-এ অর্থ ঢালছে, মনে করছে এটি এক নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম। কিন্তু বাস্তবে সোনা হল এক ধরনের অ-আয়জনক পণ্য, যার দামে প্রায়ই বুম-অ্যান্ড-বাস্ট চক্র দেখা যায়।

img

অন্যদিকে, আরেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, আমরা এখনো ২০২৬ পর্যন্ত সোনা ও রূপার দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখছি। এই পতন আসলে ছিল প্রয়োজনীয় একটি সংশোধন। বাজারে স্বল্পমেয়াদি বিরতি আসলেও, দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক উপাদানগুলো এখনো বিদ্যমান।

img

মরগান স্ট্যানলির সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সাময়িক পতনের পর সোনার দাম আগামী বছর আবারও উর্ধ্বমুখী হতে পারে।

img

১০ অক্টোবর আউন্সপ্রতি ৪,০০০ ডলারের সীমা অতিক্রম করার পর তারা অনুমান করছে, ২০২৬ সালের মধ্যে দাম ৪,৪০০ ডলারের ওপরে পৌঁছাতে পারে। তাদের মতে, বিশ্বের মুদ্রাস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের সোনা ক্রয় বৃদ্ধি সোনার বাজারকে শক্তিশালী রাখতে পারে।

img

এই পরিস্থিতি ২০০৬ সালের পুনরাবৃত্তি হতে পারে—যখন সোনার দাম মাত্র দুই মাসে ৩৬ শতাংশ বেড়েছিল, কিন্তু পরের মাসেই সেই লাভ মুছে গিয়েছিল। তাঁর পূর্বাভাস অনুযায়ী, নভেম্বর নাগাদ সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩,৫০০ ডলারে নেমে আসতে পারে।

img

সোনার সাম্প্রতিক পতন নিঃসন্দেহে বিনিয়োগকারীদের ভাবাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতামত বলছে—এটি স্বল্পমেয়াদি সংশোধন না কি দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের শুরু, তা নির্ভর করবে আগামী কয়েক সপ্তাহের বিশ্বের অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি, মার্কিন ডলার সূচক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলোর নীতির ওপর।

img

আপাতত বলা যায়, সোনার বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়লেও, সোনা এখনও নিরাপদ আশ্রয় সম্পদ হিসেবেই থেকে যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের কাছে।